পদ্মাসন: মনসংযোগ ও মানসিক প্রশান্তির চাবিকাঠি

সাকির হোসেন

যোগব্যায়ামের অন্যতম পরিচিত ও ধ্যানমগ্ন আসন হলো পদ্মাসন (Padmasana)। সংস্কৃত শব্দ ‘পদ্ম’ অর্থ ‘পদ্মফুল’, আর ‘আসন’ মানে বসার ভঙ্গি। এই আসনে শরীরের গঠন পদ্মফুলের মতো হয় বলে এ নাম। হাজার বছরের যোগচর্চায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন, যা মূলত ধ্যান ও প্রণায়ামের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে পদ্মাসন অত্যন্ত কার্যকর।

পদ্মাসনের ধরণ ও পদ্ধতি:
পদ্মাসন একটি ধ্যানমূলক আসন (Meditative Pose), যা শরীরকে স্থির ও মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এ আসনে বসে দীর্ঘ সময় চোখ বন্ধ রেখে মনসংযোগ বা প্রণায়াম করা হয়।

পদ্ধতি (কীভাবে করবেন):
একটি সমতল ও শান্ত স্থানে আসন পেতে বসুন।
পা দুটি সামনে ছড়িয়ে দিন।
ডান পা তুলে বাম ঊরুর ওপর রাখুন—পায়ের তালু ওপরে ও গোড়ালি পেটের কাছে।
এবার বাম পা তুলে ডান ঊরুর ওপর রাখুন একইভাবে।
মেরুদণ্ড সোজা রাখুন, কাঁধ ঢিলা করুন।
হাত দুটি হাঁটুর ওপর রাখুন—জ্ঞান মুদ্রা বা ধ্যান মুদ্রায়।
চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন।

শুরুর দিকে কারও পা মোড়াতে সমস্যা হলে ধীরে ধীরে অভ্যাস করুন। হাঁটু বা কোমরের ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পদ্মাসনের উপকারিতা:
১. মনোসংযোগ বৃদ্ধি করে: ধ্যান ও শ্বাসনিয়ন্ত্রণে সহায়ক হওয়ায় মস্তিষ্ক একাগ্র হয়।
২. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়: নিয়মিত পদ্মাসনে বসলে কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন) হ্রাস পায়।
৩. মেরুদণ্ড সোজা ও শক্তিশালী করে: শরীরের গঠন সঠিক রাখে, ফলে দীর্ঘ সময় বসেও ক্লান্তি আসে না।
৪. হজম শক্তি বাড়ায়: পেটের পেশি চাপের মধ্যে থাকায় হজমতন্ত্র উদ্দীপিত হয়।
৫. মাসিক সমস্যায় উপকারী (নারীদের জন্য):
শরীরের নিচের অংশে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ব্যথা কমায়।
৬. প্রণায়ামের জন্য আদর্শ ভঙ্গি: শ্বাসনালীর পথ খোলা থাকে, ফলে প্রণায়াম সহজ ও কার্যকর হয়।

কিছু অতিরিক্ত টিপস:
খালি পেটে বা হালকা খাবারের পর পদ্মাসন অভ্যাস করুন।
সকালে ঠাণ্ডা পরিবেশে ধ্যান বা শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলনের সময় আদর্শ।
শুরুতে ৫ মিনিট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।

যোগব্যায়ামের এই চিরন্তন আসন শুধু একটি শরীরচর্চা নয়, বরং এটি এক আত্মিক চর্চা—যা শরীর, মন ও আত্মাকে এক সুতোয় বাঁধে। পদ্মাসন শুধু শরীরকে স্থির রাখে না, বরং একটি স্থিতধী জীবনের দিকেও নিয়ে যায়। নিয়মিত অনুশীলন করলে যে কেউ এই অভ্যাসের সুফল পেতে পারেন।

সাকির হোসেন: লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশ যোগ ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, নগরবাড়ি অডিট এন্ড কোয়ালিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত আছেন।
প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক, এভারগ্রীন ফিটনেস কমিউনিটি (যোগব্যায়াম কেন্দ্র)
ধোবাখোলা করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ, নাটিয়াবাড়ি, আমিনপুর-বেড়া, পাবনা।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না