যোগব্যায়ামের সিদ্ধাসন: ধ্যান ও আধ্যাত্মিকতার পথে এক আদর্শ আসন

সাকির হোসেন

যোগব্যায়াম শুধু একটি ব্যায়াম পদ্ধতি নয়, বরং এটি একটি জীবনদর্শন—যা শরীর, মন ও আত্মার সংহতিতে সহায়তা করে। এই ধারার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন হলো সিদ্ধাসন (Siddhasana)। যোগশাস্ত্রে সিদ্ধাসনকে ধ্যান ও আধ্যাত্মিক উন্নতির এক শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সিদ্ধাসন কী?

সিদ্ধাসন একটি ধ্যানমূলক আসন, যেখানে শরীরকে স্থির রেখে মনকে একাগ্র করার সহায়ক ভঙ্গি গৃহীত হয়। সংস্কৃত শব্দ ‘সিদ্ধ’ অর্থ ‘সম্পূর্ণ’, ‘পূর্ণতা’ বা ‘সিদ্ধ ব্যক্তি’। আর ‘আসন’ অর্থ ‘বসার ভঙ্গি’। অর্থাৎ, সিদ্ধাসন হলো সেই আসন যা সাধনার জন্য উপযুক্ত এবং সাধককে সিদ্ধির পথে পরিচালিত করে।

কীভাবে সিদ্ধাসন করবেন?

সঠিকভাবে সিদ্ধাসন করার পদ্ধতি:

  1. সমতল ও নিরিবিলি স্থানে একটি মাদুর বা যোগম্যাটে বসুন।
  2. বাম পায়ের গোড়ালি এনে ডান ঊরুর নিচে রাখুন।
  3. ডান পা আনুন এবং গোড়ালি বাম ঊরুর ওপর রাখুন যাতে পায়ের পাতা শ্রোণির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
  4. দুই হাঁটু মাটিতে স্পর্শ রাখুন এবং মেরুদণ্ড সোজা রাখুন।
  5. দুই হাত জানুতে রাখুন (জ্ঞান মুদ্রা বা চিন মুদ্রা ব্যবহার করতে পারেন)।
  6. চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিন শ্বাস-প্রশ্বাসে।

সিদ্ধাসনের উপকারিতা

সিদ্ধাসনের উপকারিতা অত্যন্ত বহুমুখী, বিশেষ করে ধ্যান এবং প্রাণায়ামের ক্ষেত্রে:

  • মনকে শান্ত ও একাগ্র করতে সহায়তা করে
  • মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
  • স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • ধ্যান ও প্রাণায়ামের জন্য আদর্শ ভঙ্গি
  • যৌনশক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে বলে হঠযোগ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে
  • মূত্রাশয় ও পেটে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা উন্নত করে

সিদ্ধাসনের সতর্কতা

  • যাদের হাঁটু বা নিতম্বে আঘাত বা ব্যথা রয়েছে, তাদের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  • নতুন অভ্যাসকারীদের শুরুতে ৫-১০ মিনিট বসা যথেষ্ট, ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো যেতে পারে।

সিদ্ধাসন: ধ্যানের জন্য আদর্শ আসন

যোগগুরুদের মতে, সিদ্ধাসন হচ্ছে এমন একটি আসন, যেখানে দীর্ঘক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকা সম্ভব হয়। এ কারণে একে ধ্যানের জন্য আদর্শ আসন (Best yoga pose for meditation) বলা হয়। যোগসূত্রেও বলা হয়েছে, সিদ্ধাসনে ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে সাধক মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে পারেন।

যোগব্যায়ামের বিভিন্ন আসনের মধ্যে সিদ্ধাসন একটি সহজ, কার্যকর এবং আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিপূর্ণ আসন। এটি শুধু দেহ নয়, মন ও চেতনার গভীর সংহতিতে সহায়তা করে। নিয়মিত অনুশীলন করলে যে কেউ এ আসনের উপকারিতা উপভোগ করতে পারেন।

সাকির হোসেন: লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশ যোগ ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, নগরবাড়ি অডিট এন্ড কোয়ালিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত আছেন।
প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক, এভারগ্রীন ফিটনেস কমিউনিটি (যোগব্যায়াম কেন্দ্র)
ধোবাখোলা করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ, নাটিয়াবাড়ি, আমিনপুর-বেড়া, পাবনা।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না