রেজাউল করিম
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যৎ কর্মবাজারে টিকে থাকা কঠিন। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা পাঠ্যক্রমে থাকলেও এর ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনও অনেকাংশেই সীমিত। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কম্পিউটার শেখার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান অবস্থা ও সমস্যা:
১. তত্ত্বনির্ভর শিক্ষা: বেশিরভাগ স্কুল-কলেজে কম্পিউটার শিক্ষা শুধুমাত্র বইনির্ভর। ব্যবহারিক ক্লাস না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং, মাল্টিমিডিয়া বা অফিস অ্যাপ্লিকেশনের মতো দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।
২. অপর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা: অনেক প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব নেই, আবার কোথাও থাকলেও সেগুলো আধুনিক সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট সংযোগবিহীন।
৩. প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব: কম্পিউটার শিক্ষকদের অনেকেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পান না, ফলে তারা শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে গাইড করতে পারেন না।
৪. গ্রাম-শহরের বৈষম্য: শহরের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল সুবিধা থাকলেও গ্রামীণ স্কুল-কলেজগুলো পিছিয়ে আছে।
করণীয়:
- প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন: সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব চালু করতে হবে।
- ব্যবহারিক ক্লাস বাধ্যতামূলক: শুধু তত্ত্ব নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামিং (যেমন: Python, Scratch), গ্রাফিক ডিজাইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার উপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
- শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ: আইসিটি শিক্ষকদের নিয়মিত আপডেটেড প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা নতুন প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারেন।
- ডিজিটাল কনটেন্ট বৃদ্ধি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এডুকেশন টেক স্টার্টআপগুলোর সহযোগিতায় ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে তা সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
সফলতার উদাহরণ:
কিছু স্কুলে ইতিমধ্যেই কোডিং ক্লাব, রোবোটিক্স ওয়ার্কশপ এবং ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। যেমন: ঢাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা এখন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শিখছে। এই মডেল সারাদেশে ছড়িয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রযুক্তিবান্ধব প্রজন্ম তৈরি করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগ নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে দেশের তরুণরা গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসে সফল হবে। এ জন্য সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক এবং টেক কমিউনিটির সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
রেজাউল করিম: কলেজ শিক্ষক (তথ্য ও প্রযুক্তি), বেড়া, পাবনা।