রেজাউল করিম
প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ইন্টারনেটের গতি ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে অবিরাম। ৪জি-এর পর এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে ৫জি প্রযুক্তি। এটি শুধু ইন্টারনেট স্পিডই বাড়ায় না, বরং যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শিল্প এবং স্মার্ট সিটিগুলোকে আরও উন্নত করবে। এই নিবন্ধে আমরা জানবো ৫জি টেকনোলজি কী, এর সুবিধা এবং বাংলাদেশে এর বাস্তবায়নের সম্ভাবনা।
৫জি কী?
৫জি (পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক) হলো ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের সর্বশেষ প্রযুক্তি, যা ৪জি (LTE) থেকে ১০০ গুণ দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারে। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- অতি-দ্রুত গতি (১-১০ Gbps)
- কম লেটেন্সি (১ মিলিসেকেন্ডের কম)
- সর্বোচ্চ কানেক্টিভিটি (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০ লক্ষ ডিভাইস)
৫জি-এর সম্ভাব্য প্রভাব
১. সুপারফাস্ট ইন্টারনেট ও ডেটা ট্রান্সফার
- HD/4K স্ট্রিমিং, ক্লাউড গেমিং এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) অ্যাপস আরও স্মুথ হবে।
- ডাউনলোড স্পিড বাড়ায় বড় ফাইল মুহূর্তেই ডাউনলোড করা যাবে।
২. স্মার্ট সিটি ও IoT (ইন্টারনেট অব থিংস)
- স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এবং হোম অটোমেশন সিস্টেম ৫জি-এর মাধ্যমে আরও কার্যকর হবে।
- হসপিটাল, ফ্যাক্টরি ও কৃষি খাতে IoT ডিভাইসের ব্যবহার বাড়বে।
৩. টেলিমেডিসিন ও রিমোট সার্জারি
- কম লেটেন্সির কারণে ডাক্তাররা রিয়েল-টাইমে রোবোটিক সার্জারি করতে পারবেন।
- দূরবর্তী অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।
৪. শিল্প বিপ্লব ৪.০
- ফ্যাক্টরি অটোমেশন, AI ও মেশিন লার্নিংয়ের জন্য ৫জি অপরিহার্য।
- রোবট ও ড্রোনের মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে।
৫জি-এর চ্যালেঞ্জ
- ইনফ্রাস্ট্রাকচার খরচ: ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে প্রচুর টাওয়ার ও ফাইবার অপটিক প্রয়োজন।
- সিকিউরিটি ঝুঁকি: বেশি ডিভাইস কানেক্টেড থাকায় সাইবার অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে।
- স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ: কিছু গবেষক ৫জি রেডিয়েশনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশে ৫জি: কতদূর?
বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) ইতিমধ্যে ৫জি ট্রায়াল শুরু করেছে। তবে, পুরো দেশে ৫জি চালু করতে আরও সময় লাগবে কারণ:
- মোবাইল অপারেটরদের বিনিয়োগ প্রয়োজন
- ৫জি-সাপোর্টেড ডিভাইসের প্রাপ্যতা সীমিত
- গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করা
৫জি প্রযুক্তি শুধু ইন্টারনেটের গতিই বাড়াবে না, এটি ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। তবে, এর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন, সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা। বাংলাদেশ যদি সময়মতো ৫জি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে, তাহলে ডিজিটাল অর্থনীতিতে একটি বড় ধাপ এগিয়ে যাবে।
রেজাউল করিম: কলেজ শিক্ষক (তথ্য ও প্রযুক্তি), বেড়া, পাবনা।