রেজাউল করিম
প্রথাগত কম্পিউটারগুলোর সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে বিজ্ঞানীরা বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এরই মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তি হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। এটি শুধু কম্পিউটিং শক্তিই বাড়াবে না, বরং স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আমূল পরিবর্তন আনবে। এই নিবন্ধে আমরা জানবো কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কী?
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য প্রক্রিয়া করে। প্রচলিত কম্পিউটার বিট (0 বা 1) ব্যবহার করলেও কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে কিউবিট (Qubit)। কিউবিট একই সাথে 0 ও 1 হতে পারে—এটিকে সুপারপজিশন বলে। এছাড়াও, এনট্যাঙ্গেলমেন্ট নামক কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্যের কারণে একাধিক কিউবিট একসাথে সংযুক্ত থাকতে পারে, যা গণনার গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সুবিধা
১. সুপারফাস্ট গণনা ক্ষমতা
- ফ্যাক্টরাইজেশন: রেকর্ড সময়ে বড় সংখ্যাকে মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে পারে, যা ক্রিপ্টোগ্রাফিতে বিপ্লব আনবে।
- ডাটাবেস সার্চ: কোয়ান্টাম অ্যালগরিদম (যেমন Grover’s Algorithm) ডাটাবেস সার্চের গতি বাড়াবে।
২. ওষুধ আবিষ্কার ও উপাদান বিজ্ঞান
- কোয়ান্টাম সিমুলেশনের মাধ্যমে ওষুধের অণুর গঠন ও বিক্রিয়া দ্রুত বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।
- নতুন উপাদান (যেমন: উচ্চতাপ-সহনশীল সুপারকন্ডাক্টর) আবিষ্কার ত্বরান্বিত হবে।
৩. আর্থিক মডেলিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
- স্টক মার্কেটের জটিল মডেলিং এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কার্যকর হবে।
- মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
চ্যালেঞ্জ ও বাধা
- কিউবিট স্থিতিশীলতা: কিউবিট খুবই সংবেদনশীল—তাপ, শব্দ বা তড়িৎচুম্বকীয় প্রভাব এদের ত্রুটিপূর্ণ করতে পারে (ডিকোহেরেন্স)।
- ক্রায়োজেনিক শীতলীকরণ: বেশিরভাগ কোয়ান্টাম কম্পিউটার -273°C-এর কাছাকাছি তাপমাত্রায় পরিচালনা করতে হয়।
- সফটওয়্যার ও অ্যালগরিদম: প্রচলিত প্রোগ্রামিং ভাষা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত নয়।
বিশ্ব ও বাংলাদেশের অবস্থান
গুগল, আইবিএম, মাইক্রোসফট এবং চায়না বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করছে। 2019 সালে গুগল “কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি” অর্জন করেছে বলে দাবি করেছে। বাংলাদেশে এখনও এই প্রযুক্তি গবেষণার পর্যায়ে নেই, তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, তবে এর সম্ভাবনা অসীম। এটি যদি পূর্ণতা পায়, তাহলে কম্পিউটিং, মেডিসিন, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশের জন্য এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়া যায়।
রেজাউল করিম: কলেজ শিক্ষক (তথ্য ও প্রযুক্তি), বেড়া, পাবনা।
