জেনারেটিভ এআই: ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নাকি মানব সমাজের নতুন চ্যালেঞ্জ?

আলাউল হেসেন

বিশ্ব প্রযুক্তির ধারায় এক নতুন বিপ্লবের নাম জেনারেটিভ এআই (Generative AI)। এক দশক আগেও যা ছিল শুধুই গবেষণাগারের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আজ তা হয়ে উঠেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিও—সবকিছুই এখন তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। তবে এই অসাধারণ সৃজনশীল প্রযুক্তি যেমন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে, তেমনি নানাবিধ সামাজিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নও তুলে দিচ্ছে।

জেনারেটিভ এআই কী?

জেনারেটিভ এআই এমন একটি শাখা, যা বিদ্যমান তথ্য ও ডেটার উপর ভিত্তি করে নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে সক্ষম। যেমন: ChatGPT টেক্সট তৈরি করে, DALL·E ছবি আঁকে, Sora ভিডিও নির্মাণ করে, এবং Suno সংগীত সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রযুক্তি নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং ডীপ লার্নিং-এর উপর ভিত্তি করে কাজ করে।

শিল্প ও সাহিত্য জগতে বিপ্লব

জেনারেটিভ এআই ইতোমধ্যে সাহিত্য, কবিতা, গল্প, এমনকি গান রচনায়ও ঢুকে পড়েছে। অনেক লেখক AI-এর সহায়তায় দ্রুত ড্রাফট তৈরি করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন আইডিয়া বা স্টাইল উদ্ভাবনে এটিকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করছেন। প্রশ্ন উঠছে—মানব সৃষ্টিশীলতা কি তবে মেশিন দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে?

শিক্ষা ও গবেষণায় জেনারেটিভ এআই

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে AI দিয়ে গবেষণা পেপার তৈরি, ডেটা অ্যানালাইসিস, ভাষান্তর, এমনকি কোড লেখাও এখন সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীও ChatGPT, Google Gemini, Claude প্রভৃতি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পড়াশোনায় সহায়তা নিচ্ছেন। তবে এর অপব্যবহার যেমন চৌর্যবৃত্তি বা গবেষণায় অনৈতিকতা বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে জেনারেটিভ এআই এখনো পুরোপুরি বিস্তৃত না হলেও ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি অপরিহার্য খাত হয়ে উঠবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এআই দক্ষতা উন্নয়ন, বাংলা ভাষাভিত্তিক মডেল তৈরি এবং কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির ইন্টিগ্রেশন জরুরি হয়ে পড়েছে। একইসাথে তৈরি হয়েছে চাকরি হারানোর আশঙ্কা, তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা এবং নৈতিক ব্যবহারের প্রশ্ন।

নৈতিকতা ও ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি

জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে: কে হবে কনটেন্টের মালিক? মিথ্যা তথ্য ছড়ালে দায় কার? Deepfake বা ভুয়া ভিডিওর ফলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। আইন, নীতিমালা ও সামাজিক সচেতনতা ছাড়া AI-এর অপব্যবহার রোধ করা কঠিন হবে।

জেনারেটিভ এআই মানবজাতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটি আমাদের চিন্তাশক্তিকে যেমন বাড়াতে পারে, তেমনি দায়িত্বহীন ব্যবহার মানব সমাজকে বিপদের মুখেও ফেলতে পারে। তাই প্রয়োজন সচেতন, মানবিক ও নৈতিকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা। জেনারেটিভ এআই আমাদের সহকারী হতে পারে, কর্তৃত্ববাদী নয়—এই বোধকে সামনে রেখেই আমাদের অগ্রসর হওয়া দরকার।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না