ফাইভজি: বাংলাদেশের সংযুক্তির নতুন অধ্যায় নাকি অজানা আতঙ্কের নাম?

আলাউল হোসেন

প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে—যার নাম ফাইভজি (5G)। বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে এই পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন করেছে, আর বাংলাদেশও সেই তালিকায় যুক্ত হতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—৫জি কি শুধু দ্রুত ইন্টারনেটের প্রতিশ্রুতি, নাকি এর পেছনে রয়েছে বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত?

ফাইভজি কী ও কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?

ফাইভজি (5G) হচ্ছে মোবাইল কমিউনিকেশনের পঞ্চম প্রজন্ম, যা ৪জি-র চেয়ে গড়ে ১০ গুণ বেশি গতি, অতি-নিম্ন লেটেন্সি এবং বেশি ডিভাইস সংযোগ নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে শুধু স্মার্টফোনই নয়, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, স্মার্ট শহর, রিমোট সার্জারি, এমনকি এআই চালিত কারখানা—সবই কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে।

বাংলাদেশে ফাইভজির অগ্রগতি

বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালেই পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালু করে। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর টেলিটক প্রথম এ সেবা চালু করে ঢাকার কিছু এলাকাতে। এরপর ধীরে ধীরে বেসরকারি অপারেটরগুলোকেও লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—নেটওয়ার্ক কাঠামো প্রস্তুত নয়, বিশ্বমানের স্পেকট্রাম নিলাম প্রক্রিয়া, এবং ব্যবহারকারীদের প্রস্তুতি এখনও অসম্পূর্ণ।

৫জি কীভাবে বদলে দিতে পারে জীবনধারা?

  • শিক্ষা: ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও লাইভ ক্লাসে নতুন মাত্রা আসবে
  • চিকিৎসা: রোবটিক সার্জারি ও রিমোট হেলথ কেয়ার বাস্তব রূপ পাবে
  • ব্যবসা: স্মার্ট ফ্যাক্টরি, দ্রুত ট্রানজ্যাকশন ও এআই ইন্টিগ্রেশন
  • বিনোদন: উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিও গেম ও লাইভ স্ট্রিমিং হবে আরো নিখুঁত
  • যানবাহন: সেল্ফ ড্রাইভিং গাড়ি এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয়তা

চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগ

১. স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিতর্ক

অনেকেই মনে করেন, ফাইভজির উচ্চ-ঘনত্বের তরঙ্গ (millimeter waves) শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও WHO এখন পর্যন্ত একে ‘নিরাপদ’ বলেই বিবেচনা করছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা এখনো চলমান।

২. প্রযুক্তিগত বৈষম্য

শহর ও গ্রামের মাঝে ফাইভজির ব্যবধান আরও বাড়তে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৪জি-ও নেই, সেখানে ৫জি পৌঁছানো কতটা বাস্তবসম্মত?

৩. ডিভাইস ও খরচ

৫জি চালাতে হলে প্রয়োজন ৫জি-সক্ষম ডিভাইস এবং ব্যয়বহুল ডেটা প্ল্যান। যা সাধারণ জনগণের জন্য একপ্রকার ‘লাক্সারি’ হয়ে উঠতে পারে।

ফাইভজি ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সরকার “স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১” এর যে রূপরেখা দিয়েছে, সেখানে ফাইভজি অপরিহার্য ভূমিকা রাখবে। স্মার্ট গ্রাম, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট গভার্নেন্স—সবকিছুতেই ৫জি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠবে। তবে এ প্রযুক্তি যাতে মানবিক ও নৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়, সে দিকেও নজর রাখা জরুরি।

ফাইভজি কোনো প্রযুক্তি মাত্র নয়, এটি এক নতুন যুগের সূচনা। তবে প্রতিটি নতুন প্রযুক্তির মতো একে ঘিরেও রয়েছে সুযোগ ও আশঙ্কা। প্রয়োজন তথ্যভিত্তিক আলোচনা, সমন্বিত পরিকল্পনা এবং সর্বস্তরে ডিজিটাল শিক্ষা। কারণ প্রযুক্তি কেবল তখনই মানবতার সহায়ক হয়, যখন তা সুস্থ, সুষম ও দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করা হয়।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না