আলাউল হোসেন
উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য মানবতাবোধের উচ্চতর বা নবতর কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। এই মানবতা বোধকে কেন্দ্র করেই শোষণ বিরোধিতা ও সর্বমানবের কল্যাণ কামনা উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় লক্ষ্যণীয়। শাফিক আনাম তার কাব্যে ব্যক্তির অন্তর্লোক-বহির্লোক পর্যবেক্ষণ, রূপায়ন, চিত্রায়ন ও চিহ্নায়ন করেন। কেবল আখ্যান বর্ণনায় নয়, কাহিনীর তারল্যেও তার অনীহা। তবে শব্দকে ভিন্নমাত্রায় পৌঁছে দেয়ার চমৎকারিত্ব, পঙক্তিগুলোকে এক ধরণের রহস্যময়তা থেকে আরেক রহস্যমায়ায় পৌঁছে দেবার এক অদ্ভুত কুশলতা এবং ছন্দপতনকে প্রশ্রয় না দিয়ে ছন্দ প্রয়োগের অনায়াস দক্ষতা তার কবিতার শরীরকে করে কারুকার্যময়।
কবি শাফিক আনামের জন্ম ১৫ জুলাই ১৯৭২ সালে মাতুলালয়ে পাবনার বেড়া উপজেলার দয়রামপুর গ্রামে। তার বাবা মোসলেম উদ্দিন খান ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। বাবার পিরাপিরিতে নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করেন। রসায়নশাস্ত্রে ১৯৯৫ সালে সম্মান ও ১৯৯৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনেই ১৯৯৯ সালের ২ জুন সুজানগর উপজেলার উত্তর রাণীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ৬৯ নং মমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি ১৭ নং ভাটিকয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি গত প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, সুজানগর উপজেলা শাখার সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার সততা, কর্মদক্ষতা ও ভালোবাসার বিপরীতে শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসাই দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দেবার সুযোগ করে দিয়েছে।
শাফিক আনাম শব্দ বিনির্মাণের পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন এক অনাবিস্কৃত বোধ, যা তার মানবমঙ্গল পড়লেই বুঝা যায়। মানবমঙ্গল তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটিকে তিনটি খণ্ডে ভাগ করা হয়েছে- দেবখণ্ড, নরখণ্ড ও বোধিখণ্ড। মানবমঙ্গলের প্রতিটি কবিতার পরিপোষণ, অলংকারিক কৃৎকৌশল, লোকজ ও লোকায়ত জীবনাচার সংস্থাপনা ও চারুবাগ্মিতায় অন্যতম।
তিনি কাব্যের শরীরে অযথা শব্দ চাপিয়ে দেয়ার পক্ষে নন। তিনি খুব সচেতনভাবেই উপমা, উৎপেক্ষা, অলঙ্কার ও সংশ্লেষের ব্যবহার করে গেছেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাম বাংলার সহজ-সরল ভাষায় গ্রাম-জীবনের প্রেম বিরহের ধারা ট্রাজিক ফর্মে উপস্থাপন করেছেন। তার কাব্যে প্রেমতত্ত্বের অপূর্ব দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, যেখানে আত্মপ্রেম, সুফি সাধনার ভাবপ্রেরণায় প্রকাশিত-
কৈবর্ত কন্যা
তোমার বুকের স্তনে কামনার স্বপ্ন বিলাস
রাজকুমার সপ্তডিঙা মধুকর
স্তনাগ্রে উরু জঙ্ঘায় কালসিটে মনসার অভিশাপ
তোমার কামনার আয়ুতে স্নায়ুতে
পাশা খেলে আজ ঈশ্বরের অতিচেনা শরীর।
(দ্রোপদীর আঁচল তলে পুড়ে চলে হাউসের চাঁদের বাসর)
সাহিত্যের সবচেয়ে কঠিন শাখা নিঃসন্দেহে কবিতা। সুগঠিত একটা কবিতার দু’টি লাইনের ব্যাখ্যা দিয়ে অনায়াসে দুই হাজার শব্দের প্রবন্ধ লেখা যায়। অবাক বিস্ময়ে ভাবতে ইচ্ছে করেÑ কবিতার এক একটি শব্দ উচ্চকিত ঢেউয়ের মতো, মুহূর্তে প্লাবিত করে দিতে পারে ভাবসমুদ্রের এপার ওপার, চেতনার এধার ওধার। কবিতার এক একটা লাইনের ভার অনেক ব্যাপক। কথাসাহিত্য যেখানে ভাবকে ক্রমাগত বহির্মুখী করে বিভিন্নভাবে তার প্রকাশ আর ভাবোন্মোচন করতে থাকে, কবিতা ঠিক তার উল্টো পথে ধাবমান, সে ভাবের মাঝেও মহাভাবের জন্ম দেয়। শাফিক আনাম এমনই একজন যিনি অতীতের সব ফর্ম ভেঙে কবিতায় তৈরি করলেন পরমসিদ্ধ এক উপলব্ধি-
আমাদের মায়েরা প্রিয় বধূ
পুরোহিত পীর বলি দেয় তৃণভোজী জীব
প্রতিসাম্যের মাংস বিলায় ঘরে ঘরে
ঘর পোড়া আগুনে সেঁকে নেয় শীতের সংসার
শুরু হয় রাঙা প্রভাত
সমাজে নেমে আসে সন্ন্যাসী সাজ
পাকা রেল সড়কের মত শুয়ে থাকে আমাদের বিশ্বাস
হেঁটে হেঁটে চলে যায় বেদনার মৌ
উঁকি মেরে চেখে নেয় গেরস্থের আবাস নিবাস
(নহলি যৈবন এই দাসের কফিন)
পৃথিবী দৃশ্যময়, যা অদৃশ্য তাও সারোৎসার। সারবস্তুর খোঁজে প্রতিটি মানুষ জীবন নামের ট্রেনে পরিভ্রমণরত। এই পরিভ্রমণে সকল দৃশ্য চোখের সীমা আর বোধের চৌহদ্দি পেরিয়ে, মনের অভ্যন্তরে গিয়ে চেতনার কার্নিশে দোল দিতে পারে না। বিজ্ঞান একে হয়তো স্মৃতি বলবে, দর্শনশাস্ত্র বলবে স্মৃতিকাতরতা। এইসব দৃশ্যের আড়ালে বা ফাঁকফোঁকরেও কিছু দৃশ্য থেকে যায়। ছেঁড়া ছেঁড়া দৃশ্যকল্পের স্বল্প আলোয় শাফিক আনাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন আর জনপদের তত্ত্বতালাশ দেনএ। একটা দৃশ্যের মধ্যে আর একটা দৃশ্য, একটা গল্পের মধ্যে আর একটা গল্প, একটা জীবনের মধ্যে অজস্র জীবন, একটা দুপুরের মধ্যে আর একটা তপ্তদুপুর। কবির খণ্ড খণ্ড শব্দ ও কাব্যপ্রলয় এমনই-
এ দৃশ্য গতকালের।
এখন পুরোহিত ব্রাহ্মণ মন্দির প্রাসাদে
হরিলুটের মজমায় খাগরাই বাতাসার উলুধ্বনি
বোল হরি, হরি বোল
ডিঙি নৌকায় মা-দূর্গা দুলছে
মৃদু মন্দ বাতাসে…
কাঁচা সন্ধ্যা
ঢোলের তালে ঢোলক বাজে
ধিনতা-ধিন, ধিনতা-ধিন।
(শঙ্খচিল শামুকের দেশে)
কল্পনা যখন বাস্তবের সাথে মিশে যায় মনে আর সেই কল্পনা গেঁথে যায় অবচেতন মনে তখন জন্মায় জাতিস্মর- বিজ্ঞান জাতিস্মর কে এভাবেই ব্যাখ্যা করে। বিজ্ঞানের কাছে জাতিস্মরবাদ আর মানসিক ব্যাধির বিশেষ ফারাক নেই। প্যারাসাইকোলজি জাতিস্মর নিয়ে অনেক কাঁটা ছেঁড়া করে চলেছে। শাফিক আনাম তার কাব্যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, তথ্য আর লোকজ অনুসঙ্গনির্ভর জাতিস্মরবাদ তুলে ধরেন-
আলোর বাহিরে কাল
সময়ের অন্ধ বিন্দু
মন, মেধা, মস্তিষ্কের গ্যালাক্সিয়া
তারপর সন্ধ্যা
বন্ধ্যা চোখে আতুর ঘরের স্বপ্ন
স্বপ্ন দ্রোহে খেলা করে ভ্রুণ হত্যার কানামাছি
চোখ বেঁধে অন্ধ-বন্ধ খেলা
খেলে যাক বালিকার দেহে
এদেহের বাইরে ভেতরে
আর ভিতরে ভিতরে ভয়ের লুকানো বোধ।
গেরস্থের ঘরের চালায় দুটো কাক
নির্বোধ
ডেকে চলে কায়া কায়া…
(শঙ্খচিল শামুকের দেশে)
প্রতিটি শিল্প বা সৃজনশীল কর্ম নির্ধারিত হয় নান্দনিক ক্ষমতার ওপর। পৃথিবী নিজে থেকে কবিতা, চিত্র, অসীম শিল্পকর্ম পরিবর্তন করে। জীবনের নান্দনিক গুরুত্ব নির্ধারণ করে শিল্পীর বোধ। তাকে শ্রোতা ও দর্শকদের সম্পর্কে ধারণা দেয়। যাতে মানুষ বিশ্ব সম্পর্কে উপলব্ধির ক্ষেত্র নির্ধারণ করতে পারে। হাজার হাজার বছর অতীত থেকে মানুষের হৃদয়ে এই সৌন্দর্য- চেতনা কাজ করেছে। তার ফলে সাহিত্য, সঙ্গীত, স্থাপত্য, বিজ্ঞান, দর্শন- এই সব কিছুরই বিকাশ ঘটাতে চিত্রকলা ও সৌন্দর্য-চেতনা কাজ করেছে। এই সৌন্দর্য-চেতনা মানুষের মনে আপনা আপনিই এসেছে। শাফিক আনামের কাব্যে নন্দনতত্ত্বের প্রকাশ ঘটেছে একটু ভিন্নভাবে-
অর্বুদ অনার্য কুমার আর নির্বেদ নিষাদ বালক
নির্জ্ঞান নিঃসঙ্গ তুই
পাললিক পুতুল আমার
নেমে এসো গর্ভবতী মেঘের শরীরেÑ সীমানার পরপারে
ভেতরে ভেতরে খেলে যাক ভয় আর দ্রোহের স্বপ্ন শিহরণ।
জন্মের কোলে মাথা রেখে মৃত্যু আসে
নির্ঘুম স্বপ্ন চৈতন্যে
সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে নিবিড় বসে থাকে
শ্রম আর মেধার টুপটাপ ঘাম
ঘুমিয়ে পরে লকাই
তারপর পুতুল বিয়ের লুকোচুরি।
(শঙ্খচিল শামুকের দেশে)
তিনি যৌনতার নিরাভরণ বর্ণনা দিতে গিয়ে মনোবৈজ্ঞানিক টার্ম ব্যবহার করতেও ভোলেননি। আদিরস কে যদি কাব্যে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে পাঠকের কাছে তা বহুমাত্রিক রূপ পায়। শাফিক আনাম তার কাব্যে নান্দনিক মনন ও মনোদৈহিক ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে আদিরস তুলে ধরেছেন সফলভাবে-
ভেনাসের স্তন বৃন্তে ঝুলে থাক ইচ্ছের আগুন
উরুর আগুনে চেপে যৌবন বল্লম
আয়ুতে স্নায়ুতে চলে ভৌতিক শৃঙ্গার
যৌবনে যৌবন ঢেলে তরলে তরল
স্নায়ুতে বায়ুতে ক্ষয় ক্ষয়িষ্ণু শরীর
গন্ধ বিলায় না আর গন্ধম গাছ।
গাছের পাঁজরে গাঁথা আমূল ত্রিশূল
যীশুর কষ্ট ভীষণ মিথ্যুক যীশু।
মাটির মূর্তি আজ আত্মায় বিলীন
স্বর্গের তাড়নে জল চারণভূমি
মানুষের চারণভূমি ঈশ্বরের নয়
ঈশ্বরের কষ্ট কাঁদে যীশুর দেহে।
(দ্রোপদীর আঁচল তলে পুড়ে চলে হাউসের চাঁদের বাসর)
দেহভঙ্গী, প্রতীক, সংকেত, মূদ্রা, দৈহিক ভাষা ব্যবহার করে কাব্যময়তায় পৌছে যান মনোদৈহিক উদ্ভাসে-
ঘুমের আড়ামোড়া ভেঙে, ভেঙে নেই ঈশ্বরের ক্রুশ
বিহারে কুটুম পাখি
কাকের কর্কশ চিৎকারে ভেসে চলে প্রার্থনাগীতি
এ দৃশ্যের অন্তরালে ডেকে ডেকে সাড়া আধারের নন্দনীয়া
নগরের নটিরা অভিসারে গেলে জোছনার দেহে নামে
অন্ধ বাউল।
(শঙ্খচিল শামুকের দেশে)
শাাফিক আনামের কাব্যের শব্দেরা আপন দ্যুতিতে প্রীতিময়, ভাবনারা বৃক্ষের মত ছায়াময়। বক্তব্য বস্তুনিষ্টতার কূল ঘেঁষে সত্যনিষ্ঠ। তার কাব্যে আশ্রয় আছে, আছে নিরীক্ষার মাঝেও চেতনার চুলচেরা স্ফূরণ। তিনি সময়ের কবি নন। তিনি প্রতি মুহূর্তকে পিছে ফেলে কাব্য নির্মাণ করেন, কাব্যিক চিত্রায়নে নির্মাণ করেন মহাকালের ছবি।
আলোর বাহিরে কাল
সময়ের অন্ধ বিন্দু
মন, মেধা, মস্তিষ্কের গ্যালাক্সিয়া
তারপর সন্ধ্যা
বন্ধ্যা চোখে আতুর ঘরের স্বপ্ন
স্বপ্ন দ্রোহে খেলা করে ভ্রুণ হত্যার কানামাছি
চোখ বেঁধে অন্ধ-বন্ধ খেলা
খেলে যাক বালিকার দেহে
এদেহের বাইরে ভেতরে
আর ভিতরে ভিতরে ভয়ের লুকানো বোধ।
(শঙ্খচিল শামুকের দেশে)
তার কাব্যে প্রতীকবাদ, চেতনাবাদ, উত্তোরাধুনিক চেতনা গেঁথে নিয়ে মগ্নচৈতন্যে চিত্রায়িত হয়। মিথ, টোটেম, লোকসংস্কার, ধর্মবিশ্বাস যেন তার মননে মননে-
পানসী নায়ে নায়র যাবে শবরীবালিকা
অনর্গল কুয়াক-কুয়া ডেকে চলে হলুদিয়া
হলুদিয়া ময়না টিয়া ডেকে চলে কুয়াক-কুয়া
চাঁদ জোছনার নায়র শেষে ন্যাড়া মাথা বালিকার দল
ছিঁবুড়ি মৌদেহে জলের দহনে নামে
ধুয়ে নেয় বিধাতার পাপ
নাইতে নামে নায়র ভুলে বালিকা বধুয়া দেহে
ঘোমটায় সোহাগ মুড়ে
সদ্যস্নাত দেহ পল্লবে মুছে নেয় বালকের দেহলী সুঘ্রাণ
গামছায় লেগে থাকা মুক্তার জলবিন্দু
জলরঙ মৌ-বিলাস।
(স্বর্গত্যাগী ফুল ঝরছে বকুলের বনে)
অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ‘কাব্য’ হলো কবি ও পাঠকের ভাবনা-বিনিময়ের মাধ্যম। এই বিনিময় যেমন চৈতন্যের সঙ্গে বিষয়ের, তেমন ঘটনাপুঞ্জের সঙ্গে সময়ের এবং কল্পনার সঙ্গে মনীষার। এই বিনিময় শিল্পের সঙ্গে শিল্পমননের। ফলে কবির সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক দূরবর্তী হলেও ‘শুদ্ধতম কবি’ শিল্পিত ঐক্য রক্ষা করেই পাঠকের অন্তরে প্রবেশ করেন। শাফিক আনাম মিথ-পুরাণ, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, পরিবেশ, সামাজিক বিবর্তন, গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ও নৃতত্ত্ব কাব্যদেবীর দেহালংকারে মাধ্যমে জীবনানুগ ও প্রাকৃতিক বিষয় আত্মস্থ করে তার নির্যাস তুলে ধরেছেন তার কাব্যে।
প্রতœপাথরে শুয়ে ডানা কাটা পাখির ছানা
কামদেবীর উলঙ্গ নৃত্য,
আর পাইথন, জাগুয়ার ছুটে চলে প্রগতির প্রপিতামহের দিকে
খাপরার বাসরে প্রাইমেট
গাছের ডালে বসে মুন্সিয়ানির চাকা ঘুরায় মুন্সি মুষিক
চর্বির চোখে জ্বেলে কমল মাটির দেহ
শুদ্রের পদসঞ্চালনে কাঁপে অশুচি বায়ু
অ্যান্টিমেরা ব্লো করে চলকের বলে
বলে কয়ে বল ক্ষয় ক্ষয়ের আকর।
(ইতিহাস ভ্রান্ত পাট গুহাচিত্র)
শাফিক আনামের কবিচিত্ত তার অকৃত্রিম সহৃদয়তায় এবং সূক্ষ্ম বাস্তবদৃষ্টিতে আবিষ্কার করতে পেরেছে। ‘মানবমঙ্গল’ কাব্যে তিনি যে ধারার সৃষ্টি করেছেন, তা একদম নতুন মাত্রা বয়ে নিয়ে এসেছে এবং বাংলা কাব্যের ইতিহাসে তা নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।