বন্দে আলী মিয়া : গ্রামীণ জীবনের ভাষ্যকার

আলাউল হােসেন

আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই,
এক সাথে খেলি আর পাঠশালায় যাই।
অথবা
বর্ষার জল সরিয়া গিয়াছে জাগিয়া উঠিয়াছে চর
গাঙ শালিকের গর্ত খুঁড়িয়া বাঁধিতেছে সবে ঘর।
অথবা
ময়নামতির চরের মতো বিখ্যাত ও কালজয়ী কবিতার রচয়িতা কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯০৯ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনার শহরের রাধানগরের নারায়ণপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মুন্সী উমেদ আলী মিয়া এবং মাতা নেকজান নেসা। কবির শৈশব ও কৈশোর কৈটেছে পাবনার গ্রামীণ ও নাগরিক পরিমণ্ডলে। মাত্র পাঁচ-ছয় বছর বয়সে তাঁকে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে (বর্তমানে আরএম একাডেমি) ভর্তি করা হয়।
১৯২৩ সালে সেখান থেকেই ম্যাট্রিক পাস করেন এবং চিত্রবিদ্যায় ডিপ্লোমার জন্য কলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমীতে ভর্তি হন। পরে ১৯২৬ সালে তাঁর বাবার ইচ্ছানুসারে শহরের জেলাপাড়া মহল্লার রাবেয়া খাতুনের সাথে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি আরো তিনটি বিয়ে করেন। ওই তিন স্ত্রীর নাম হেনা, শামসুন্নাহার ও পরীবানু। তিনি ১৯২৭ সালে কৃতিত্বের সাথে চিত্র বিদ্যায় ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেন এবং একই বছর কলকাতার আশুতোষ লাইব্রেরি কর্তৃক শিশুতোষ বই ‘চোরজামাই’ প্রকাশ করেন। পরে তিনি প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খাঁ’র অনুপ্রেরণায় করটিয়া সাদত কলেজে ভর্তি হয়ে কিছু কাল এফএ পড়েন।

১৯২৯ সালে কবি বন্দে আলী মিয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ মনসুরউদ্দীনের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি, সুরেনবাবু ও তাঁর বিদ্যুষী স্ত্রী প্রজ্ঞা দেবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কবিকে সেখানে নিয়ে যান। তাঁদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আলাপ পরিচয় এমনকি স্বরচিত বইপত্রেরও আদান-প্রদান হয়। সে সময়ে কলকাতা করপোরেশন স্কুলসমূহের অধিকর্তা ছিলেন ক্ষিতীশ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন এই দম্পতির জামাতা।
একদিন প্রজ্ঞা দেবী জামাতার কাছে কবি বন্দে আলী মিয়ার চাকরির জন্য সুপারিশ করেন। তিনি করপোরেশনের এক স্কুলে কবির চাকরির ব্যবস্থা করেন। প্রায় ১৬ বছর কবি করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

কলকাতায় থাকার সুবাদে সমকালীন পত্রপত্রিকার সাথে কবি বন্দে আলী মিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কিছুদিন পর কবি ‘ইসলাম দর্শন’-এর সাথে জড়িয়ে যান। করপোরেশন স্কুলে শিক্ষক থাকাকালে তিনি ‘কিশোর পরাগ’, ‘শিশু বার্ষিকী’, ‘জ্ঞানের আলো’ প্রভৃতি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও জড়িত ছিলেন।

১৯৩২ সালে কবি বন্দে আলী মিয়ার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘ময়নামতীর চর’ প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করে কলকাতার ডি এম লাইব্রেরি। কবির এই ‘ময়নামতীর চর’ কাব্যগ্রন্থ পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশংসাপত্র পাঠান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর কবি ঢাকায় সাহিত্য লিখে এবং ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৬২ সালে শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। পরে ১৯৬৫ রাজশাহী বেতারকেন্দ্রে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন এবং একই বছর সাহিত্য-প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন রাজশাহীর কাজীহাটের বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে পাবনার রাধানগরের ‘কবিকুঞ্জ’তে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

আধুনিক বাংলা কবিতা-প্রাঙ্গণে গ্রামীণ জীবনের দৃশ্যাবলীর ভাষ্যকার হিসেবে কবি বন্দে আলী মিয়া অগ্রবিবেচ্য। তিনি তাঁর দেখা জগতের নদী, নদীতীর, তীরবর্তী দৃশ্যাবলী এবং সেখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকার গতিবিধির চালচিত্র বর্ণনা করেছেন কবিতা-কথায়। বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতীয় উপমহাদেশসহ সারা বিশ্ব যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় উত্তাল, তখন আরো অনেকের মতো নিভৃত পল্লীচারী কবি বন্দে আলী মিয়া সমকালীনতা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে চিরন্তনতার এক অবয়বে নিমগ্ন রাখলেন। হয়তো তিনি অনুভব করেছিলেন- রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি আর অর্থনীতির সমূহ পরিবর্তনশীলতার মধ্যে গ্রামীণ জীবন আর পরিবেশ অপেক্ষাকৃত নিস্তরঙ্গ। এই আপাতনিস্তরঙ্গতায় অনুভূতির ঢেউ প্রবাহিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। আজ নতুন করে ভাবার সময় এসেছে, তাঁর কবিতার স্থানিক ও কালিক তাৎপর্য অন্বেষার।

গল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশু-কিশোরতোষ প্রভৃতি বিচিত্র মাধ্যমে সাহিত্যচিন্তার প্রকাশ ঘটালেও বন্দে আলী মিয়ার স্বাচ্ছন্দবিচরণ ছিল কবিতা-আসরে। তিনি আদতে কবি। জীবিকার তাগিদে বিবিধ পথে সাহিত্যচর্চা করলেও তার চিন্তাচক্র কাব্যবলয়ে স্থিত ছিল সব সময়। স্বল্পপরিসরে হলেও তার কবি পরিচিতি ওই বিশেষ প্রবণতারই প্রমাণ বহন করে। ‘ময়নামতীর চরে’র কবি বন্দে আলী মিয়ার সেই পরিচয়কে আরো বিস্তৃত করে। আরো মজবুত করে। জীবনের কবি বন্দে আলী মানুষের চিন্তা আর সংলগ্নতার অপরিহার্যতাকে অগ্রাহ্য করতে পারেননি। তাঁর পুরো কবিতাবলয় এই নিবিড় সংলগ্নতাকে আশ্রয় করে মুক্তি আর উত্তরণের পথ খুঁজেছে যেন।

নোবেল বিজয়ী কবি, বিশ্ববিশ্র“ত ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথের অভিমত ও মূল্যায়ন-ভাষ্য বন্দে আলীর কবি-অভিব্যক্তিকে আন্দোলিত করে কাব্যজীবনের সূচনালগ্নেই। রবীন্দ্রনাথ ‘ময়নামতীর চর’ সম্পর্কে লিখেছেন- ‘তোমার ময়নামতীর চর কাব্যখানিতে পদ্মাচরের দৃশ্য এবং তার জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ ছবি দেখা গেল। তোমার রচনা সহজ ও স্পষ্ট, কোথাও ফাঁকি নেই। সমস্ত মনের অনুরাগ দিয়ে তুমি দেখেছ এবং কলমের অনায়াস ভঙ্গিতে লিখেছ। তোমার সুপরিচিত প্রাদেশিক শব্দগুলো যথাস্থানে ব্যবহার করতে তুমি কুণ্ঠিত হওনি, তাতে করে কবিতাগুলো আরো সরস হয়ে উঠেছে। পদ্মাতীরের পাড়াগাঁয়ের এমন নিকটস্পর্শ বাংলা ভাষায় আর কোনো কবিতায় পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। বাংলা সাহিত্যে তুমি আপন বিশেষ স্থানটি অধিকার করতে পেরেছ বলে আমি মনে করি।’ (২৬ জুলাই ১৯৩২)। প্রথম গ্রন্থ সম্পর্কে অপরিণত বয়সে (!) এই মূল্যায়ন প্রাপ্তি কি বন্দে আলীর জন্য বিরাট স্বীকৃতি নয়? আর তারপরের বন্দে আলী? অনেক কবির ভিড়ে, অনেক কবিতায় লুকোচুরি খেলায় আমরা আজ ভুলতে বসেছি কবি বন্দে আলী মিয়াকে। অনেক তো সময় গেল; এখন সময় তাঁদের নতুন করে পাঠকসমাজের সামনে হাজির করার। আর সে দায়িত্ব আমাদের-সাহিত্য পাঠকের, সাহিত্যভক্তের, কবিতাপ্রেমিকের।

সমকালীনতা, নাগরিক যন্ত্রণা কিংবা সভ্যতার দাগ বন্দে আলীর কবিতায় ঠিক সরাসরি কোনো প্রভাব কিংবা প্রলেপ ফেলেনি; তাঁর কবিতার কথামালায় আছে চরজীবন নিসর্গ আর গ্রামীণ মানুষের জীবনধারার বর্ণনার কারুকার্য। যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত যেমন দুঃখ বর্ণনার কবি, বন্দে আলী মিয়া তেমনি গ্রামদৃশ্য বর্ণনার কবি।

মোহিতলালের প্রেমনির্ভরতা কিংবা নজরুলের বিদ্রোহ চিন্তা তাঁকে প্রভাবিত করতে পারেনি। আকর্ষণ করেনি তিরিশি কবিতার রূঢ়বাস্তবতা-ঘনিষ্ঠতার জোয়ার। তাই বন্দে আলীর কথা মনে পড়লেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে চিরচেনা গ্রামের চিরন্তন ছবি। ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় কবি লিখেছেন :
গহিন নদীর দুই পার দিয়া আঁখি যায় যত দূরে
আকাশের মেঘ অতিথি যেন গো তাহার আঙিনা জুড়ে।
মাছরাঙ্গা পাখি একমনে চেয়ে কঞ্চিতে আছে বসি
ঝাড়িতেছে ডানা বন্য হংস-পালক যেতেছে খসি।

নদীপারের মানুষের জীবন, নদীর ভাঙাগড়া আর জোয়ার-ভাটার অদ্ভুত মোহজালে আবদ্ধ। সেখানকার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, আনন্দ-বেদনা সবই যেন নদীর রুপালি আলো, মাটির ঘ্রাণ, আকাশের অসীমতা আর পাড়ভাঙা আওয়াজের আর্তনাদের সহচরী। জীবিকা, গৃহস্থালি, উল্লাস আর উদাম দৃষ্টি চরপারের নদীকেন্দ্রিক নিত্যদিনের চালচিত্র। চর ভাঙে, চর জাগে, বসতি ওঠে, বসতি বসে-এভাবেই চলতে থাকে চরের জীবন-চোরাবালি খেলা। বদলায় না চরের দৃশ্য। প্রকৃতির সাথে মানুষের নিবিড়তা অনুভব করেছেন কবি, দেখেছেন বৃক্ষলতার সাথে মানুষের সখ্য। তিনি মানেন- গ্রামজীবনের অপ্রতিরোধ্য অনুষঙ্গ-বৃক্ষসঙ্গ-লতাসঙ্গ। বৃক্ষলতার দোলার সাথে সাযুজ্য খুঁজেছেন তিনি মানবমনের দোলাচলতার। বুড়ো বটগাছ, আর পাতা নড়ার শব্দ; কচুরিপানার ফুল, তার কাজল বরণ লিকলিকে দেহ পিঠভরা এলোচুল, করম কাঁটা-নিতল দীঘির পার আর কলমিলতার সোনালি স্বপন বন্দে আলীর কবিতায় যেন তৈরি করে ডাহুকি হাঁসের চঞ্চলতা। খেটেখাওয়া মানুষ, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পল্লীবালা, এমনকি শাকতোলা বুড়ি অনায়াসে বন্দে আলীর কবিতা-গাঁথার কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে ওঠে। বাদ যায় না বড় বুবু, শিকারি ফৈজু, কুচবরণ কন্যা, মেঘরাঙা মেয়ে, সোনার বরণ মেয়ে, মা, নানা আর নানী। কৃষাণীর নিদ্রা-আলস্য, অশেষ পড়ে থাকা কাজ আর বুকভরা না-আসা দিনের না-জানার বেদনা, যেমন তাঁর কবিতায় বোনে আর্তনাদের মায়া, তেমনি না-বদলানো হাসিখুশি চিরচেনা দোকানদারের আর্তিছবিও অনায়াস-বিবৃত হয় তাঁর কবিতা-জমিনে। কাজের সন্ধানে দূরগাঁয়ে ছুটে যাওয়া দিনমজুরের কষ্টকথা, আপনজনের জন্য তার বিরহীমনের হাহাকার প্রভৃতির প্রতিও আকর্ষণ ছিল বন্দে আলীর। বন্যায় আক্রান্ত শিকারি ফৈজু কিংবা শাকতোলা বুড়ির বর্ণনায় বন্দে আলীকে আমরা খুব বেশি আন্তরিক দেখি।
হাওরে পড়েছে ঢল:
পানির শব্দে ফৈজু গাজীর মন হলো চঞ্চল।
ভোর হতে ফৈজু চলিল গাঁয়ের দক্ষিণ সীমানায়
পানি আসিয়াছে হাওর ভরিয়া-মাঠে মাঠে স্রোাত যায়।

ঐতিহ্য-অন্বেষা বন্দে আলীর কবিতার একটি ভিন্ন দিক। বাঙালির হাজার বছরের সামাজিক ঐতিহ্য তাকে মুগ্ধ করে। তিনি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন-
আজকে মোদের নাইকোরে আর গোলায় গোলায় ধান।

মুখে হাসি নেই, নেই গলায় গান। পালতোলা নৌকার বহর আর তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া সারিগানের গীতলতা আজো তাঁকে শিহরিত করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যও কবিকে আজ বড় বেশি ভাবিত করে। তিনি যেন দেখতে পান-
হিন্দু ও মুসলিমের সৌহার্দের মাঝে
দুলিতেছে শাণিত কৃপাণ।

গ্রামের মানুষের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার অকৃত্রিমতা যেন এ দেশের ঐতিহ্যেরই স্মারক। লোককথা, লোকগাঁথা, সংস্কার, লোকবিশ্বাস প্রভৃতি গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক প্রসঙ্গ। আরো রয়েছে স্থান-নাম নিয়ে নানান কথা-কাহিনী। বন্দে আলী মিয়ার কবিতায় গ্রামীণ এসব বিষয় স্থান পেয়েছে নিজ নিজ মহিমায়। জনশ্র“তির সোনার কলমি, সোনার মোহর, মুখদোষে কারো গরুর বাছুরের মৃত্যুর খবর, আজগুবি সব ‘দেউদে’র কাহিনী কিংবা মানবসন্তানের কুমির হয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্দে আলী বর্ণনা করেন অভিজ্ঞ দর্শকের মতো। যেন তিনি এসবের নীরব সাক্ষী। গ্রাম আর গ্রামের দৃশ্য, ঘটনাকে ছাড়িয়ে তিনি যে গ্রামীণ মানুষের জীবনাভিজ্ঞতা ও অর্জন-বর্জনের প্রতিচিত্র চিত্রণে সচেতন ছিলেন, সে সম্পর্কে কবিতা-পাঠক অবহিত হতে পারেন বন্দে আলীর কবিতার নিবিড় পাঠ থেকে।

নগর, নগরজীবনের যান্ত্রিকতা, শিল্প বিপ্লব-পরবর্তী শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা বিকাশের ক্রম অগ্রসরতা, মানবসভ্যতার অগ্রগমন ও বাস্তবতা বন্দে আলীর কবিচেতনাকে নাড়া দিয়েছিল প্রবলভাবে। সমকালীন সঙ্কট ও সম্ভাবনাকে তিনি বেমালুম ভুলে গিয়ে জীবন রূপায়ণ চিন্তায় মগ্ন থাকেননি। দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাব, অনাহারজনিত যন্ত্রণা আর নগরকেন্দ্রিক বিজ্ঞানভাবনাও কবি বন্দে আলীকে আলোড়িত করে। তিনি তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো লিখতে থাকেন জীবনবোধের আলোয় শোভিত সব উজ্জ্বল কবিতা। তখন আর তিনি গ্রামজীবনের ভাষ্যকার হয়ে থাকেন না- তিনি হয়ে ওঠেন জনতার কবি, সভ্যতার কবি, জীবনের কবি। হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, মুক্তি কামনা, দেশভাগ, পরাধীনতা থেকে মুক্তির আনন্দ, মহাযুদ্ধের ক্লান্তি আর মূল্যবোধের ক্রমাবনতি ও রূপান্তরকে তিনি কবিতার খাতায় আঁকেন স্বদেশলগ্ন শিল্পীর মায়াময় হাতে।

বন্দে আলী মিয়া কবিতাগত প্রাণ। কবিতায় তাঁর স্বস্তি, তাঁর আমৃত্যু বসতি। কবিতা শিল্পের, কবিতাজালের জন্য তাঁর সাধনা, প্রত্যাশা আর হাহাকার শেষত আকুতির আকার গ্রহণ করে। পৃথিবীর সব মায়া-মমতা ছেড়ে যাওয়ার কালে তাই তিনি স্বগতোক্তি করেন কবিতার জন্যই।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না