আলাউল হোসেন
মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে এসেছিলো মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স। তখনকার দিনে এটিই সকলের কাছে লেটেস্ট মডেল ছিলো, প্রিয় ছিলো। কিন্তু পুরাতন শেষ হয়ে নতুন জন্ম নেবে এই তো জগতের রীতি… এখন কালপরিক্রমায় আইফোন পর্যন্ত সহজলভ্য।
অনুষ্ঠান বাড়িতে কাসার জগ বা হাঁড়ি ছিলো একসময়ে সেরা উপহার। হাত ঘড়ি অথবা দেয়াল ঘড়ি প্রদানের দৃশ্যও বেশিদিন পূর্বের নয়। এখন দিন বদলে গেছে। মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। কাসার যুগ আর কখনও ফিরে আসবে না।
শিশুকাল থেকে আমরা দেখে আসছি; এমনকি আমাদের আরও কত পূর্ব থেকে এর প্রচলন রয়েছে আমার জানা নেই। স্কুল-কলেজের ক্রীড়ানুষ্ঠানে পুরস্কার হিসেবে প্রচলন ছিলো থালা-বাসন, আয়না-চিরুণীর। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকতে তিন পায়ে দৌঁড়ে একবার আমিও আয়না উপহার পেয়েছিলাম। ৩৪ বছর পূর্বের সে স্মৃতি এখনও স্পষ্ট মনে আছে, কিন্তু সেই পুরস্কারটি কত বছর আমার কাছে অক্ষত ছিলো- তা আমার মনে নেই। তবে আমি নিশ্চিত এক দেড় বছরের বেশি নিশ্চয়ই নয়। অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে কাশীনাথপুরের আলোর ফেরীওয়ালাখ্যাত এমএল নজরুল ইসলামের (উত্তরণ লাইব্রেরী) কাছ থেকে ছোটদের রবীন্দ্রনাথ বইটি উপহার পেয়েছিলাম, যা এখনও সযত্নে কাছে রেখে দিয়েছি। স্কুল-কলেজে অধ্যয়নকালীন জাতীয় শিক্ষাসপ্তাহ প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অন্তত ডজনখানেক পুরস্কার পেয়েছিলাম, যার সবই ছিলো বই ও সার্টিফিকেট; বইগুলো পাঠপূর্বক সযত্নে সেলফে রেখে দিয়েছি। থালা-বাসন পেলে কতদিন এই স্মৃতি ধারণ করা যেত- আমার জানা নাই।
কালের বিবর্তনে এখনও পুরস্কার হিসেবে থালা-বাটি একটা জঘন্য মনোনয়ন বলে আমি মনে করি। কেননা, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এক ধরনের ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। ধরে নেয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা থালা-বাটি পাওয়ার জন্যই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। অথবা তাদের বাড়িতে থালা-বাটির বড্ড অভাব! কিংবা তারা একমাত্র থালা-বাটি পাওয়ার যোগ্য! অথবা থালা-বাটিই হল শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সেরা পুরস্কার!
কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ইদানীং এই রেওয়াজ পরিবর্তন করেছে। থালা-বাটির পরিবর্তে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য পুরস্কার হিসেবে মেডেল, ক্রেস্ট বা শ্রেণি উপযোগী গল্পের বই দিচ্ছে অনেকেই। তবে সে সংখ্যা নগন্য। সিংহভাগেরই রুচির পরিবর্তন হয়নি। নিজেরা মোটোরোলা থেকে স্মার্টফোন-আইফোন কিংবা বাইসাইকেল থেকে মোটরসাইকেল হয়েছি; কিন্তু সন্তানদের জন্য থালা-বাটি হতে বের হতে পারিনি। আমরা বাণিজ্য মেলায় লক্ষ টাকা ব্যয় করি, কিন্তু বই মেলায় একটি টাকাও নয়!
অথচ মুখে বলি ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না…’
