আলাউল হোসেন
একটি শিশু পৃথিবীতে আসে কেবল জন্মগত চাহিদা নিয়ে নয়, বরং ভালোবাসা, মনোযোগ ও নিরাপত্তার গভীর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। এই তিনটি উপাদান—ভালোবাসা, মনোযোগ ও নিরাপত্তা—শিশুর মানসিক বিকাশ, আত্মপরিচয় ও আত্মবিশ্বাস গঠনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজ যদি একটি শিশুকে এই সহায়ক পরিবেশ দিতে পারে, তবে সে বেড়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসী, সাহসী ও দায়িত্ববান একজন মানুষ হিসেবে।
ভালোবাসা: নিরাপত্তা ও স্বীকৃতির শিকড়
ভালোবাসা শিশুর আত্মবিশ্বাসের প্রথম বীজ।
একটি শিশুর যদি অনুভব হয় যে, “আমি যেমন আছি, তেমন করেই আমাকে গ্রহণ করা হচ্ছে,” তবে সে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করে।
অভিভাবকের স্পর্শ, আলিঙ্গন, আদর বা ভালোবাসার কথা—এসব শিশুর মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলে।
ভালোবাসাহীন শাসন, সীমাহীন নির্দেশনা বা উপেক্ষা শিশুর আত্মমর্যাদাবোধ ভেঙে দিতে পারে।
মনোযোগ: শোনার ও দেখার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সম্মান
শিশু যখন কিছু বলতে চায়, তখন মনোযোগ দিয়ে শোনা তার কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার একমাত্র রাস্তা।
যখন মা–বাবা বা শিক্ষক শিশুর কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনেন, তখন সে উপলব্ধি করে—তার মতামতের মূল্য আছে।
এমনকি একটি সাধারণ আঁকা ছবি বা গল্পের মধ্যেও যদি বড়রা আগ্রহ দেখায়, তবে শিশুর অভ্যন্তরীণ শক্তি জাগ্রত হয়।
এই মনোযোগই তাকে শেখায়—সে মূল্যবান, সে পারবে।
নিরাপত্তা: আত্মবিশ্বাস গঠনের নিরাপদ আশ্রয়
শিশুর নিরাপত্তা কেবল শারীরিক নয়—বরং মানসিক, আবেগগত ও সামাজিক নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ।
একটি শিশু যদি জানে, “আমি ভুল করলেও কেউ আমাকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করবে না,” তবে সে স্বাধীনভাবে শেখে।
ঘরে–স্কুলে সহানুভূতিশীল পরিবেশ, নিয়মতান্ত্রিকতা ও সীমারেখা শিশুর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ, স্থিরতা ও নিরাপত্তার অনুভব তৈরি করে।
এমন নিরাপদ আবহেই সে সাহস করে প্রশ্ন করতে, পরীক্ষা করতে ও নিজের মত প্রকাশ করতে শেখে।
কীভাবে গড়ে তোলা যায় আত্মবিশ্বাসী শিশু?
১. প্রতিদিন কিছু সময় একান্তে দিন: শুধু শিশুর সাথে সময় কাটান—ফোন ও অন্যান্য মনোযোগ-চুরি করা বিষয় থেকে দূরে থেকে।
তার অনুভূতি ও মতামতকে সম্মান করুন: আপনি যদি বলেন, “তোমার মতটা শুনতে চাই,” তবে সে নিজের মূল্য বুঝতে শেখে।
ভুল করলেও ভালোবাসা দিন:
“তুমি খারাপ ছেলে/মেয়ে।”
“এই কাজটা ঠিক হয়নি, কিন্তু আমি জানি তুমি আরও ভালো করতে পারো।”
প্রত্যাশা থাকুক, তবে চাপ নয়:
শিশু যেন জানে, তার চেষ্টা প্রশংসনীয়—পারফেকশন নয়, প্রচেষ্টাই গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের আচরণে নমনীয়তা রাখুন: বড়রা যদি নিজের ভুল স্বীকার করে, শিশুরাও শিখে আত্মসমালোচনায় ভয় নেই।
ভালোবাসা শিশুর হৃদয়কে উষ্ণ করে, মনোযোগ তাকে আত্মপরিচয়ের দরজা দেখায়, আর নিরাপত্তা তাকে সাহসী করে তোলে। এই তিনটি উপাদানের সংমিশ্রণেই গড়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসী, স্থিতিশীল ও মানবিক শিশু। একদিন সেই শিশুই হয়ে ওঠে পরিবারের গর্ব, সমাজের সম্পদ ও দেশের ভবিষ্যৎ।