পাবনার কবি ও কবিতা: কৃষ্ণকিশোর রায়

গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন

কৃষ্ণকিশোর রায়
কৃষ্ণকিশোর রায়ের ‘দূর্গালীলাতরঙ্গিনী’ গ্রন্থটির প্রকাশক শ্রী সুবোধচন্দ্র রায়ের লেখা ভূমিকা থেকে জানা যায়, কৃষ্ণকিশোর রায় প্রাচীন কবিদের মধ্যে একজন। গ্রন্থখানিও নিভৃত পল্লীর ক্ষৃদ্র গৃহকোণে লুকায়িত ছিল। বঙ্গকাব্যের ইতিহাসে ‘দূর্গালীলাতরঙ্গিনী’ উচ্চস্থান দখল করার যোগ্য সন্দেহ নাই। কৃত্তিবাস রচিত রামায়ণে যেরূপ রামচরিত্র লিখিত হয়েছে, কাশীরাম দাসের মহাভারতে যেরূপ কুরুপাণ্ডবের সমগ্র ইতিহাস ও কৃষ্ণচরিত্র কীর্তিত হয়েছে, এ গ্রন্থেও সেরূপ প্রাঞ্জল ভাষায় ধারাবাহিকভাবে আনুপূর্বিক দূর্গালীলা বর্ণিত হয়েছে। কবির প্রতিনিয়ত পাবনায় বাস হেতু গ্রন্থধানিতে উক্ত জেলার প্রচলিত ভাষার বাহুল্য লক্ষ্য করা যায়। অন্যান্য পুরাতন কবিদের ন্যায় তিনিও বর্ণাশুদ্ধি দোষে দোষী। কৃষ্ণকিশোর রায়ের প্রকাশক কর্তৃক কবি সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যে নিশ্চিত হওয়া যায়, কবি পাবনায় জন্মেছিলেন এবং নিজ জন্মভূমিতেই জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ অষ্পষ্টই থেকে যায়। তবে তিনি যে আদি মধ্যযুগের কবি ছিলেন, তাঁর আত্মপরিচয় কবিতাপাঠে এটি কিছুটা উপলব্ধি করা যায়।

কৃষ্ণকিশোর রায়ের কবিতা
কুমারী বিহার

প্রত্যয় বালিকাগণ উঠিয়া বিহানে,
গিরিপুরে মিলে আসি পার্ব্বতীর সনে॥
গিরিরাণী গৌরী কোলে বৈসয়ে অঙ্গনে,
চারিপাশে ঘিরে আসি সব বালাগণে॥
সবাকারে রাণী নানা উপহার দেয়,
পার্ব্বতী সহিতে সবে সতত খেলায়॥
ভুলিয়া থাকয়ে সবে জনক জননী,
সকলের প্রাণমন নগেন্দ্র নন্দিনী॥
কখনো মেনকা রাণী গৌরীকে সাজায়,
নানা যন্ত্র রামাগণ বসিয়া বাজায়॥
নাচয়ে পার্ব্বতী কত ভঙ্গী রঙ্গী করি,
সঙ্গে সঙ্গে নাচে সব কুমারী সুন্দরী॥
বালাগণ সঙ্গে গৌরী সতত খেলায়,
শিব শিব বলে সদা শিবগুণ গায়॥
গৌরীর সহিতে যত বালাগণ সব,
করতালি দিয়া করে হর হর রব॥
শিবপূজা বিনে গৌরী না করে আহার,
শিবপূজা বিনে অন্য খেলা নাহি আর॥
মৃত্তিকার শিবলিঙ্গ করয়ে গঠন,
নানা ফুল তুলিয়া আনয়ে বালাগণ॥
গঙ্গাজলে বিলুদলে পুঁজে মহেশ্বর,
চারিপাশে রামগণ বলে হর হর॥
খেলার প্রধান খেলা শিবের পুজন,
যে খেলা খেলয়ে গৌরী খেলে বালাগণ॥ (আংশিক)

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না