গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন
অদ্ভুত আচার্য
পাবনা জেলার অমৃতকুণ্ডা গ্রামে সপ্তদশ শতকে আবির্ভূত সাঁতোলের রাজা রামকৃষ্ণের সভাকবি নিত্যানন্দ আচার্য অদ্ভুত আচার্য নাম ধারণ করেন। অদ্ভুত আচার্য কবির আসল নাম নয়। চৈতন্যোত্তর রামায়ণ অনুবাদকদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। ‘অদ্ভুত রামায়ণ’-এর রচয়িতা বলেই হয়তো কবি ‘অদ্ভুতাশ্চার্য’ বা ‘অদ্ভুতাচার্য’ নামে খ্যাত হয়েছিলেন। কবির আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম শ্রীনিবাস (বা কাশী) আচার্য ও মাতার নাম মেনকা। চাটমোহর উপজেলার চাটমোহর রেল-স্টেশন সংলগ্ন অমৃতকুণ্ডা বা বড়বাড়ি ছিল তাঁর পৈতৃক নিবাস। কবি জাতিতে ব্রাহ্মণ। আত্মপরিচয়ের একটি পাঠান্তরে কবির ‘অদ্ভুত আচার্য’ নামের কারণ বিবৃত হয়েছে-
রাম আজ্ঞা করিল রচিতে রামায়ণ।
অদ্ভুত আচার্য নাম তাহার কারণ॥
কবির অধিকাংশ পুঁথি মালদহ ও রংপুর থেকে পাওয়া গেছে। অদ্ভুত আচার্যের গ্রন্থের প্রাচীন পুঁথি সহজলভ্য না হওয়ায় ড. সুকুমার সেন তাঁকে সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগের কবি বলে মনে করেছেন। অন্যদিকে কবি ষোড়শ শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন বলে অভিমত দিয়েছেন মণীন্দ্রমোহন বসু। ড. নলিনীকান্ত ভট্টাশালী অদ্ভুত আচার্যের জন্মসন ১৬৪৭ সাল বলে রায় দিয়েছেন। অদ্ভুত আচার্য মূল রামায়ণের অনুবাদ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি ‘আধ্যাত্ম-রামায়ণ’, ‘অদ্ভুত-রামায়ণ’, ‘যোগবাশিষ্ঠ-রামায়ণ’ এবং কালিদাসের ‘রঘুবংশ’ থেকেও কাব্যের উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন। ফলে তাঁর কাব্যের কলেবর বেশ হৃষ্টপুষ্ট রূপ পেয়েছিল। ড. সুকুমার সেন অনুমান করেছেন কবির গ্রন্থে অন্যান্য রামায়ণী কবিদের রচনাও যুক্ত হয়েছিল, ফলে তাঁর কাব্যের আকার কৃত্তিবাসী রামায়ণকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
অদ্ভুত আচার্যের কিছু শ্লোক
০১.
পুজি রমাপতি, হয়ে গর্ভবতী,
সুখি পদ্মাবতী হইলা মনে।
পূর্ণ দশ মাস, দিক্ সুপ্রকাশ,
প্রসবে নন্দন সে শুভক্ষণে ॥
সর্ব্ব সুলক্ষণ, দেখিয়া নন্দন,
নৃপ হৃষ্টমন হইলা অতি।
গণিয়া জ্যোতিষ, নাম অম্বরীশ,
রাখে নরঈশ গণক মতি॥
০২.
আমাকে ছাড়িয়া তুমি যাব দেশান্তরে,
শ্রীরামের মাও বলে ডাকিবে মোরে॥
০৩.
অশ্বত্থ কেটে বসত করি,
সতীন কেটে আলতা পরি॥

