পাবনার কবি ও কবিতা: প্রসন্নময়ী দেবী

গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন

প্রসন্নময়ী দেবী
কবি প্রসন্নময়ী দেবী ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্বামীর নাম কৃষ্ণকুমার বাগচী। তিনি আশুতোষ চৌধুরী ও সাহিত্য সারথী প্রমথ চৌধুরীর বড় বোন এবং প্রিয়ম্বদা দেবীর মা। মাত্র বারো বছর বয়সে রচিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘আধ-আধ-ভাষিণী’। ব্রাহ্মধর্মে বিশ্বাসী প্রসন্নময়ী কিশোরকালেই লিখেছিলেন ‘হবে নাকি এই দেশে ব্রাহ্মধর্মাচার’। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘বনলতা’, ‘নীহারিকা’ উল্লেখযোগ্য। তিনি কবিতা ছাড়াও উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী এবং স্মৃতিকথা লিখেছিলেন। সিপাহী বিদ্রোহের পটভূমিকায় লেখা উপন্যাস ‘অশোক’ তাঁর বিশিষ্ট রচনা। ২৫ নভেম্বর ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রসন্নময়ী দেবীর কবিতা
আবাহন

গৃহে এসো জীবনের আনন্দ-আলোক
নিত্য সমিলন হাসি বরষি, তামস রাশি
দূর কর বিরহের, চির-প্রাণাধার!
তোমার দূরতা ক্ষণে সহে না আমার
প্রতিভার পূর্ণভাতি, স্নেহ ঘনীভূত
তোমাতে ডুবিয়া আছি
তোমারি শরীরি ছায়া আমি, এ অন্তরে
হৃদয়-বল্লভ এসো চিরদিন তরে।

তব দরশন রাজ্যে অমানিশা নাই,
প্রণয়ের সুষমায় অবিরাম দ্বীপ্তি পায়
বিমুক্ত স্মৃতির কক্ষ, স্নেহের কিরণে
সঞ্জিবনী প্রাণসুধা বরষি’ জীবনে।

প্রতি পদার্পণে তব বসন্ত বিকাশ
ফুটে ফুল পরিমলে হিয়া-বন-ভূমিতলে
তোমার সঙ্গীত ভরা স্বর-পরশনে
ঘুমন্ত হৃদয়-তন্ত্রী বাজে কলবনে।

মানস-বিহগ মম সে কণ্ঠ শুনিয়া
চিন্তায় জাগিয়া উঠে সে গীত লহরে ছুটে
গায় প্রেম-মন্দাকিনী মাধুরী সঞ্চারে
রঞ্জিত আশার মোহ খেলে চারিধারে।

প্রাণের মিলন দেশে কল্পনা-প্রবাহে
ভাবের কোমল কায় সুখ শিশু শোভা পায়
হৃদয়ের হৃদয়েতে, শুধু দরশনে
নূতন জীবন স্রোত বাড়ে প্রতিক্ষণে।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না