গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন
হেমেন্দ্রলাল রায়
কবি ও সাহিত্যিক হেমেন্দ্রলাল রায় ১৮৯২ সালে পাবনা জেলার ফুলকোচা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ‘হিন্দুস্থান’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে দীর্ঘদিন কাজ করার পর তিনি সাপ্তাহিক ‘বাঁশরী’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন এবং সম্পাদক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। সচিত্র ‘মহিলা’ সাপ্তাহিকের সম্পাদকও ছিলেন তিনি। সতীশচন্দ্র দাশগুপ্তের খাদি প্রতিষ্ঠানের প্রচার বিভাগের কর্মী পদেও কাজ করেছেন। হেমেন্দ্রলাল ছিলেন একজন প্রকৃত স্বদেশ ভক্ত; খদ্দর প্রচার কার্যে তাঁর পরিশ্রম ও কর্মকুশলতা যথেষ্ট স্বীকৃতি লাভ করেছিল। তাঁর যুগ্ম-সম্পাদনায় ‘রাষ্ট্রবাণী’ নামক একটি রাজনৈতিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ‘হরিজন’ পত্রিকার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। সাংবাদিক জীবন শেষ করে তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রচার বিভাগে কাজ শুরু করেন। হেমেন্দ্রলালের রচিত ও প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থ : কাব্য- ‘ফুলের ব্যথা’; ‘মণিদীপা’। উপন্যাস- ‘ঝড়ের দোলা’; ‘মায়াকাজল’। গল্প- ‘মায়ামৃগ’; ‘পাঁকের ফুল’। শিশুগ্রন্থ- ‘গল্পের ঝরণা’; ‘গল্পের আলপনা’; ‘মায়াপুরী’; ‘পাঁচ সাগরের ঢেউ’; ‘দুর্গম পথের যাত্রী’। রাজনৈতিক গ্রন্থ : ‘রিক্ত ভারত’; ‘বিলাতে গান্ধীজী’। বিবিধ রচনা- ‘শিল্পীর খেয়াল’; ‘সচিত্র আরব্য উপন্যাস’। হেমেন্দ্রলাল ছিলেন নিঃসন্তান। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাই মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
হেমেন্দ্রলাল রায়ের কবিতা
কয়েদী
বনের বাঘা, বনের বাঘা! খাঁচায় পূরে বাঁধলে কে?
চিড়িয়াখানায় সঙ্ সাজিয়ে, সুখেতে বাদ সাধলে কে?
জুল্ জুলিয়ে দেখচে চেয়ে, হাততালি দেয় ছেলেমেয়ে,
নল্ খাগ্ড়ার দোদুল বনে নিঠুর ফাঁদ সে ফাঁদ্লে কে?
বাঘা ছিল বনের দুলাল, মাথায় ছিল নীলাকাশ,
থাবার তলায় কাঁটাও ছিল, ছিল নরম দুর্বাঘাস!
রাতদুপুরে নদীর তটে, মরণধ্রুপদ কণ্ঠে রটে,
উঠ্ত পড়্ত ছুট্ত উধাও, ফেল্ত হু-হু ঝোড়ো শ্বাস!
আজ্কে দেখি কুলুপ দেওয়া খাঁচাটার ঐ তিন দোরে,
কোটর-গত চক্ষুদুটো, উদর অস্থি-লীন ওরে!
নেইকো খোলা মাঠের বাতাস, নেই আকাশের অসীম আভাস,
আছে শুধুই অন্ধকার আর গতির বাধা পিঞ্জরে!
সোঁদর-বনের সবুজ-স্বপন ভোলেনি ও ভোলেনি!
চুপটি ক’রে আছে, কারণ খাঁচার দুয়ার খোলেনি।
বনের কথাই মনের কথা, ভাবচে এবং পাচ্ছে ব্যথা,
দেখচে চেয়ে, ঝড়ের ঠাকুর মেঘের নিশান তোলেনি!

