পাবনার কবি ও কবিতা: মণীশ ঘটক

গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন

মণীশ ঘটক
মণীশ ঘটকের জন্ম ১৯০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গায়। তাঁর ছদ্মনাম ‘যুবনাশ্ব’। তিনি ‘কল্লোল’ পত্রিকার অন্যতম লেখক ছিলেন। তাঁর বাবা সুরেন্দ্রচন্দ্র ঘটক ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর ভাই প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক এবং সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী তাঁর কন্যা। মণীশ ঘটক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ১৯১৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্টিকুলেশন পাশ করেন। ১৯২৩ সালে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স শেষ করে আয়কর বিভাগে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে আয়কর আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘মান্ধাতার বাবার আমল’ তাঁর রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। তিনি পাবলো নেরুদার কবিতা অনুবাদ করেছিলেন। বহরমপুর থেকে ‘বর্তিকা’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন আমৃত্যু সম্পাদনা করেছেন। তিনি ঢাকা থেকে ১৯২৭ সাল ও পরবর্তীকালে প্রকাশিত বুদ্ধদেব বসু ও অজিতকুমার দত্তের সম্পাদিত ‘প্রগতি’ পত্রিকার সাথে জড়িত একজন নিয়মিত তরুণ কণ্ঠস্বর ছিলেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থÑ শিলালিপি, যদিও সন্ধ্যা, বিদুষী বাঁক, একচক্রা প্রভৃতি। ১৯৭৯ সালে ২৭ ডিসেম্বর মণীশ ঘটক মৃত্যুবরণ করেন।

মণীশ ঘটকের কবিতা
আগুন তাদের প্রাণ

কী রোদ্দুর, কী রোদ্দুর
আগুনের সমুদ্দুর যেন।

চিড়ে খাওয়া শুকনো মাঠ আগুনের হলকা তুলে ধোঁকে
আগুনের ঢেউ লাগে আকাশে বাতাসে মুখেচোখে।
তেষ্টায় ফটিকজল পাখনা পুড়ে মাটিতে গড়ায়
পাঁকে মোষ নাক তোলে, সাধ্যি কার একটু নড়ায়।
রক্ত ঝরে পলাশের ন্যাড়া ডালে ঝর ঝর ঝর
আগুন পারে না শুধু শুষে নিতে সে রক্তনির্ঝর।
আগুন পারে না নিতে কেড়ে কালো ছেলেটার বাঁশি
আগুন পারে না নিতে মুছে কালো মেয়েটার হাসি।

মহুয়া ফুলের গন্ধ দিকে দিকে আগুন ছড়ায়
মহুয়া ফুলের মদ রক্তে রক্তে আগুন ধরায়।
কালো ছেলে-মেয়ে দুটো সাধ করে সে আগুনে পোড়ে
খল খল হেসে যায় লুটোপুটি গলাগলি করে।

আগুন তাদের প্রাণ
তারা নিবে যায়নি এখনও।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না