গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন
মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা
মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার জন্ম ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পাবনা শহরে। তিনি ছিলেন কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। তাঁর গৃহশিক্ষক ছিলেন সেকালের ‘আনোয়ারা’ উপন্যাসের রচয়িতা নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ। মাত্র ৯ বছর বয়সে তাঁর কবিতা ছাপা হয় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘আল ইসলাম’ পত্রিকায়। মুসলিম মহিলা কবিদের মধ্যে তাঁকে সনেট ও গদ্যছন্দে কবিতা লেখার পুরোধা বলা যেতে পারে। তিনি একটানা ত্রিশ বছর ‘বেগম’ পত্রিকার লেখক ও উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ছিলেন। ‘পশারিনী’, ‘মন ও মৃত্তিকা’, ‘অরণ্যের সুর’- নামে তিনটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। কাব্যপ্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি ও ১৯৭৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৭ সালের ২ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার কবিতা
মাটির স্বাক্ষর
যুগ-যুগান্তর মৃত্তিকা আপন বক্ষে রচিয়াছে এ মাটির ঘর
তারি মাঝে রচি সজ্জা জ্বালি’ সাঁঝবাতি
তারি মাঝে আসে যায় পূর্ণচন্দ্র তিথি
আঙিনায় শেফালিকা ঝরে
কাকলিতে ওঠে বন ভরে-
এ মাটি দিয়েছে মোদের এই অধিকার-
এ তার অনন্ত স্বাক্ষর।
সেই মেয়েটি
ভিজে চুলে আলো ঢেলে সে মেয়েটি খোলা জানালায়
আজ আর আসেনি তো খুলে দিতে রুদ্ধ বাতায়নে
চাইল না চোখ তুলে ওই নীল আকাশের পানে
দাঁড়ালো না ক্ষণ তরে এসে সেথা নীরব চরণে।
কে তারে লইয়া গেছে নিয়ে গেছে কোন সুদূরের ডাকে
যেথায় স্তব্ধ আত্মা মরণের হিমশীতল ছোঁয়ায়-
উৎসের মুখে তার কি ব্যথা পাথর দিল চাপি
হিমকালো ওষ্ঠাধর ক্ষণে ক্ষণে ওঠে শুধু কাঁপি।
ভুল তার ভেঙে গেছে জীবনের প্রথম পদক্ষেপে
প্রেম তার মরীচিকা হলো তার ভূজঙ্গ দংশন
তাই সে সরিয়া গেছে আজি জানালায় তল হতে
একাকী আঁধার ঘরে বসে আছে আঁখি করি নত।
জানালা রয়েছে রুদ্ধ অপেক্ষায় সেও বুঝি আছে
বাহিরে ঝড়ের বেগে পৃথিবীর বুক কাঁপিতেছে।
