গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন
বাণী রায়
বাণী রায় ৫ নভেম্বর ১৯১৮ পাবনা জেলার পেঁচাখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আইনজীবী পূর্ণচন্দ্র রায় এবং মাতা সুলেখিকা গিরিবালা দেবী। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় থেকে কুড়ি টাকা বৃত্তি নিয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরে আশুতোষ কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজিতে অনার্স এবং ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন। তারপর তিনি প্রথমে কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজ ও পরে মুরলীধর কলেজে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। কলেজে ছাত্রাবস্থাতে তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং সেগুলি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। একাধারে কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে অচিরে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর রচনায় নারীজীবনের কামনা, প্রেম, আশাভঙ্গের মর্মান্তিক বেদনা, পরিতৃপ্তির সাফল্য উপস্থাপিত হয়েছে। সমালোচনার ভ্রুকুটি সহ্য করে নিজস্ব ভাষা শৈলিতে ও রচনাভঙ্গির স্পষ্টতায় অচেনা নারীজগতের কথা বিবৃত করেছেন। তাঁর রচিত প্রথম কবিতা সংকলনের গ্রন্থ জুপিটার প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে। কাব্যগ্রন্থটি বহু বছর ধরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় ছিল। তাঁর রচনায় অনেক পাশ্চাত্য উপমা, রূপকল্প, বাগবৈদগ্ধ সুনিপুণ দক্ষতায় ব্যবহৃত হয়েছে। বাণী রায় তাঁর জন্মভূমি পাবনার আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে রচনা করেছেন নাটক- একটি মেয়ে জন্ম নিল। তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ ইংরেজি, হিন্দি, কন্নড়, মারাঠি, গুজরাতি, ইন্দোনেশীয় প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাণী রায় ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বাণী রায়ের কবিতা
একটি সনেট
উন্মীল ময়ূখমালা-কিরণ-মুকুট
রজনীর তম ভেদি জাগিল পলকে,
উথলে রজত-সিন্ধু আলোর ঝলকে
উদিল প্রাচীর নভে তপনের মুখ।
রজনীর বক্ষে আজো পুরাতন দুখ,
তারকার মাল্য, আহা, যদিও অলকে!
তবু নিশা চাহে মুক্তি আলোর স্তবকে,
প্রভাতে ফিরিয়া পেতে হৃদয় উৎসুক।
আমার প্রভাত হাসে মানসের তলে;
বর্তমান অন্ধকার নিশার পাথার।
তবি জ্যোতি ল’য়ে চাহে দিবাকর মম,
আলোক পরশ তার সঙ্গোপনে জ্বলে;
এক সনে সম্মিলিত আলোক-আঁধার;
আমার তপন হয়ে জাগো প্রিয়তম।
