গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন
মণীন্দ্র রায়
মণীন্দ্র রায় ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ অক্টোবর পাবনা জেলার শীতলাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা শহরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে তিনি ইংরেজিতে অনার্সসহ বি এ পাশ করেন। পাবনাতে থাকাকালীন ছাত্রাবস্থাতেই তিনি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র ও চিত্রশিল্পী রথীন মৈত্র’র প্রেরণায় সাম্যবাদী ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু তিনি বিশ্বাসী ছিলেন প্রগতিশীল মতাদর্শের রাজনীতিতে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কবিতা লিখেছেন। ১৯৩৬ সালে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয়। ১৯৩৯ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ত্রিশঙ্কু প্রকাশিত হয়। একচক্ষু, ছায়া সহচর, সেতুবন্ধন কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়। তেভাগা আন্দোলন এর প্রেক্ষাপটে তিনি ইয়াসিন মিঞা নামে দীর্ঘ কবিতা লিখেছিলেন। তিনি সীমান্ত ও নিষ্পন্ন নামক দুটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি অমৃত ও সত্যযুগ নামে দুটি সাময়িক পত্রিকারও সম্পাদনা করেন। তাঁর লেখা অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল- কৃষ্ণচূড়া, অন্যপথ, অতিদূর আলোর রেখা, সুখের মেলাই, অমিল থেকে মিলে, ভিয়েতনাম, লেনিন, নদী ঢেউ ঝিলমিল প্রভৃতি। ১৯৬৯ সালে তাঁর দীর্ঘ কবিতা মোহিনী আড়াল সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। ২৮ আগস্ট ২০০০ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মণীন্দ্র রায়ের কবিতা
চতুর্দশপদী
তোমার সমীপে যেতে নষ্ট হল সমস্ত জীবন
পাশপোর্টহীন একা অনাগরিকের বহিষ্কারে;
শূন্যের ঘণ্টার আজো প্রতিধ্বনি প্রহত এমন
তোমারই আশ্রয় খোঁজে অনিদ্রার রাত্রির কান্তারে।
কী জানি কী অপরাধে অর্ধপথে ধ্বসে গেল সেতু,
নিশ্চিত কক্ষের বাইরে আঁকি ব্যর্থ দীর্ঘ প্যারাবোলা,
নেই তিথি, ঋতু, স্মৃতি, এ অস্তিত্ব যেন বা অহেতু,
সঙ্গীহীন অন্ধকারে ব্রাত্য এই দগ্ধ অগ্নিগোলা।
অথচ কতো যে গেল সামান্য এ সঞ্চয়ে আমার
যতো তার তা¤্রমুদ্রা অশ্রু ততো, অন্ন-কান্না মিশে
এমন আহুতি, এই রক্তের মথিত অন্তঃসার
কালের পশুর গ্রাসে লুপ্ত হয়ে ঝরছে পুরীষে।
নগরীর বাইরে আজো বসে আছি, হৃদয়ভিধারী,
ঢালো ওষ্ঠে সুধা, প্রেম, কিংবা খোলো অগ্নি-তরবারী।
