১২ জানুয়ারি ১৯২১ সালে পাবনার সুজানগর উপজেলার নয়াগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন কবি ও সাংবাদিক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে অধ্যয়ন শেষ করে কলকাতার সাপ্তাহিক আলোড়ন (১৯৪৭) পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। দেশ বিভাগের পর কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার জুবলি প্রেসে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে তদানীন্তন ‘পাকিস্তান অবজার্ভার’ পত্রিকার সহকারী বিজ্ঞাপন ম্যানেজার নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে প্রেস ম্যানেজার পদে উন্নীত হন। ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে এ পত্রিকার সাহিত্যপাতা সম্পাদনা করেন। ১৯৫৬ সালে অবজার্ভার, পূর্বদেশ ও চিত্রালীর ম্যানেজিং এডিটর পদে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ ঘটায় চাকরি ত্যাগ করেন। একসময় সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ঢাকা আর্টস স্কুল প্রতিষ্ঠায় শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে সহযোগিতা করেন। নাগরিক জীবনের বিকার ও অসংগতিকে বিদ্রƒপের ব্যঞ্জনায় কবিতায় রূপায়ণ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বুদ্ধির তীক্ষèতায় তাঁর কবিতা সমুজ্জ্বল। কবিতাগ্রন্থ : সামান্য ধন (১৯৫৯) সূর্যের সিঁড়ি (১৯৬৫), জাগ্রত প্রদীপ (১৯৭০)। রম্যরচনা : কালপেঁচার ডায়েরী (১৯৬৭)। ‘কতিপয় আমলার স্ত্রী’ কবিতার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৪) ও কবিতায় বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭২) লাভ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে।
আব্দুল গণি হাজারীর কবিতা
গাজনা
খামারের দিগন্ত বিস্তার
চৈত্রের রাতের জ্যোৎস্নাপ্লাবিত করেছে
এই গাজনার সহ¯্র একর।
নিটোল সোনায় মোড়া চৈতালির যুবতি ফসল
ক্রমেই প্রগাঢ় হলো চাঁদের চুম্বনে।
ঘাসেরা তাঁবুর বুকে দু’একটি স্বপ্নাহত চাষী
কখনো ককিয়ে উঠে নিবিড় নিদ্রায় যায় ফিরে।
গাজনার ঘুম নেই, ঘুম নেই গাজনার চোখে
কেননা রয়েছে জানা এইখানে চাঁদ
যদিও গিয়েছে থেমে বহু রাত, অনেক প্রত্যুষ
শিশিরে ভিজেছে নিত্য ফসলের সবুজ হৃদয়।
মৃত্তিকার ধমনীতে টলমল যৌবনের ঢেউ
তবুও নিস্ফল হয় কিষাণে স্বর্ণ স্বপ্ন দেখা
চৈত্র্যের সংক্রান্তি আনে বাৎসরিক ডাকাতির ত্রাস।