পাবনার কবি ও কবিতা: মাজেদা খাতুন

কবি মাজেদা খাতুনের জন্ম ১৯২২ সালের ২৮ অক্টোবর। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে তাঁর পৈতৃক নিবাস। পিতা কাজী মোফাকখার হোসেন ও মাতা জিন্নাতুন নেছা। পারিবারিক রক্ষণশীলতা এবং সুযোগ-সুবিধার অভাবে মাজেদা খাতুনের জীবনে শিক্ষালাভের তেমন সুযোগ ঘটেনি। শিক্ষাগত যোগ্যতা পাঠশালা পর্যন্ত। মাজেদা খাতুনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে মামাবাড়ির সাহিত্য পরিম-লে। তাঁর এক মামা সেকালের সাহিত্যজগতের অন্যতম দিকপাল ইয়াকুব আলী চৌধুরী, আরেক মামা চল্লিশ দশকে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাহিত্য মাসিক ‘কোহিনুর’ পত্রিকার সম্পাদক ও কংগ্রেসকর্মী রওশন চৌধুরী। এঁদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য ও উৎসাহ মাজেদা খাতুনের সাহিত্য চর্চার প্রধান উৎস। মামাদের লাইব্রেরি ছিল তাঁর আপন ভুবন। বস্তুত সেখান থেকেই স্বশিক্ষিত হয়ে উঠলেন মাজেদা খাতুন। তাঁর প্রথম গল্প ‘মুকুর’ ১৯৪৮ সালে ‘বেগম’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বেগমসহ দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা এবং অন্য সাময়িকীগুলোতে তাঁর গল্প ছাপা হয়। তাঁর রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থ- সুবর্ণ মরালী, চাঁদের কমল চায়, ছড়া গেল ছড়িয়ে, বউ টুবানীর ফুল। তাঁর লেখা শ’খানেক গল্প ও অর্ধ শতাধিক কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে আছে। সাহিত্যচর্চায় অবদানের জন্য তিনি সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। নূরুন্নিসা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী স্বর্ণপদক (১৯৭৫), লেখিকা সংঘের রাজশাহী শাখার আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), পাক্ষিক অনন্যার সংবর্ধনা ও সম্মাননা পদক (১৯৯৯), নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার (ছোটগল্প, ২০০০), সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংবর্ধনা (২০০০) এবং লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক (২০০৫) উল্লেখযোগ্য। তিনি দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জননী। বড় মেয়ে কবি মারেফা খাতুন ঢাকা লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন।

মাজেদা খাতুনের কবিতা
সময়

তোমার ভেজা দেহে অনামিকার বসবাস
আমার তৃষ্ণার্ত চোখ ঐ সীমানায়…
যে পাহাড়ে বেপরোয়া বৃষ্টিগুলো আঁচড়ে পড়ে
বারবার জলকেলি করে, বারংবার।
ওরা বোঝে না জ্যৈষ্ঠের যৌন দহন
বোঝে না ঘেমে যাওয়া শরীরী আর্তনাদ
বোঝে না বসন্তের কোকিল সময়।
তারা বোঝে প্লাবিত ভোরের সদ্য স্নান
বোঝে মুখোমুখি ভেজা ভেজা আলাপন আর বিশ্বাস।
বোঝে মাখামাখি, মাতামাতি
আর দু’জনের স্বস্তিকর বিশুদ্ধ মিলন।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না