জিয়া হায়দার ১৯৩১ সালের ১৮ নভেম্বর পাবনা জেলার দোহারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে থেকেই সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় এম.এফ.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেক্সপিয়রিয়ান থিয়েটারের উপর সাটিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেন। “কৌটোর ইচ্ছেগুলো”, “আমার পলাতক ছায়া”, “এলেবেলে”, “নাট্য ও নাটক”, “বাংলাদেশের থিয়েটার ও অন্যান্য রচনা” ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তিনি ২০০৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
জিয়া হায়দারের কবিতা
বেলা পড়ে গেলে
কথা বলতে বলতে, প্রসংগ-অপ্রসংগে, এলোমেলো
কথা, ওরা যখন যাচ্ছিল বেলা পড়ে গেল ঠিক
তক্ষুণি, ফুটপাতে টালিগুলো
ঘষা তামা পয়সার দেহে রোদ্দুর লাগার মতো
লাল হতে গিয়ে লালচে লালা,
রেসকোর্সের রেলিঙে ষাঁড়েদের মাখামাখি দেখে
ওরা ঢলে ঢলে পড়ল এ ওর শরীরে;
এবং ওদের ইন্দ্রিয়ের কুঁড়িগুলো ফুটি ফুটি করে করে,
নিজেরাই লজ্জা পেলে, রাস্তার পাশের গাছগুলো
হেসে উঠল খিলখিল, বেলা পড়ে গেল
তখন, না, ওরা কেউ জলকে যাবে না,
কিংবা পুরানো সুরের কোনো সুদৃঢ় তরঙ্গ
ওদের নদীতে, দেহের, ছায়ার শীতল আনবে না;
সামনেই পার্ক, তা ছাড়িয়ে রঙ্গের আসর,
তাদের হৃদয়ে ডাকে বসন্ত সর্বদা;
কোকিল অথবা মউপিয়ার সুলভ সলারÑ
কথা বলতে বলতে, প্রসংগ-অপ্রসংগে, এলোমেলো
‘কথা, অধিকাংশই যদিও প্রেমের, স্বর্গীয় আদপে নয়,
যেন বেখেয়ালী, অথচ রাস্তার ধূলো বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে,
শাড়িতে অজস্র চোরকাঁটা নিয়ে বসবে ওরা সামনের সারিতে,
অতঃপর প্রচুর আলোর প্রান্তরে
বিভিন্ন শরীরে সংলগ্ন-আনন্দের অন্ধকার হবে;
বেলা পড়ে গেল না, না, ওরা কেউ জলকে যাবে না।