পাবনার কবি ও কবিতা: আনন্দ বাগচী

আনন্দ বাগচী পাবনা জেলার সুজানগরের স্বাগতা গ্রামে ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বিস্মৃতিতে তলিয়ে-যাওয়া একজন কবির নাম। অথচ নিজের যৌবনের শুরুতে যিনি ছিলেন পঞ্চাশের দশকের উজ্জ্বলতম কবিদের একজন। তৎকালীন কৃত্তিবাস (১৯৫৩) পত্রিকা, সে সময়ে তরুণ কবিদের আত্মপ্রকাশের প্রধান আশ্রয় হয়ে উঠতে পেরেছিল, সেই পত্রিকার সঙ্গেও ছিল আনন্দ বাগচীর সম্পৃক্ততা। ‘কৃত্তিবাস’ মানেই আড্ডা। সাহিত্যের সেই আড্ডাখানায় প্রায় মিছিল করে কবিরা এলো। শরৎ-শক্তি-উৎপল-মোহিত-শিবু আর ফণিভূষণ এবং তারপর আরও অনেকে। কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ এক হয়ে গেল। পরবর্তীকালে কৃত্তিবাস থেকে তিনি কাগজে-কলমে সরে এলেও কৃত্তিবাসের কবিদের সঙ্গে তাঁর ‘বন্ধুত্ব ছিন্ন হয়নি’। এই ‘কৃত্তিবাস-প্রকাশনী’ থেকেই আনন্দ বাগচীর প্রথম কবিতার বই ‘স্বগতসন্ধ্যা’ প্রকাশিত হয় ১৩৬০ বঙ্গাব্দে। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বুদ্ধদেব বসুকে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্য ‘তেপান্তর’। জীবন-জীবিকার কঠিন থেকে কঠিনতর সংগ্রামের কারণে একদিন কলকাতা ছাড়তে হয় কবিকে। বাঁকুড়ার বিখ্যাত ক্রিশ্চান কলেজে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হলেন। প্রায় সতেরো বছর তিনি ছিলেন তাঁর প্রিয় শহর, কবিতার শহর, কলকাতা থেকে দূরে। কবি আনন্দ বাগচী ৯ জুন ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে চিরপ্রস্থান করেন।

আনন্দ বাগচীর কবিতা
তারা নেই

এই সব দ্রুতপদ পথের বিনুনি ভেঙে আমি
সারারাত ঘুরে ঘুরে দূরে কাছে অসংখ্য সর্পিল
স্নায়ুর ঝংকার-শ্লথ অলিগলি হেঁটে হেঁটে শুধু
আমার পিছনে এক বকুল-ব্যাকুল দীর্ঘশ্বাস
অনুভব করে গেছি, ছদ্মবেশ উন্মোচনকামী
অন্ধমীড়ে ভেঙে-পড়া শরীরের শিথিল আক্ষেপ
চোখ-ঠাসা ঘুম নিয়ে গ্যাসের পা-ুর আলেয়ায়
সারারাত কাঁদে মন, কাঁদে রাত, ক্লান্তির করাতে
রক্তাক্ত প্রহর সব কৃষ্ণচূড়া হয়ে ফুটপাথে
ঝরে পড়ে রাতে।
দক্ষিণের বারান্দায় আসমানী শাড়ির আঁচল
আর নেই, মেয়েটার চুল গেছে কবে সময়ের
অন্ধকারে মিশে, আজ বাড়ির নম্বরে নেই প্রাণ
সময়ের সিঁড়ি বেয়ে ভাড়াটের দল নেমে গেছে
বিলুপ্তির গূঢ়-গর্তে। দ্বিপ্রহরে আজো ডাকে কাক
হয়ত বা ঠিক সেই নিমের ডালের পরে। রোদ
আশ্বিনে এখনো বুঝি গান হয়, ট্রামের লাইন
দাম্পতিক অবসাদে থেমে থাকে রাত্রির তলায়।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না