পাবনার কবি ও কবিতা: কাজী আব্দুর রউফ

কাজী আব্দুর রউফের জন্ম ২০ জানুয়ারি ১৯৪৭ বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়ায়। সাহিত্যের সর্বত্র তাঁর অবাধ বিচরণ। শিক্ষাজীবন থেকেই সাহিত্যানুরাগী। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন একজন আর্মি অফিসার। পরবর্তীতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪-৫টি দেশে বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেছেন। তবে থেমে থাকেনি তাঁর সাহিত্য চর্চা। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও জার্নালে ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় কলাম, কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বয়সে বার্ধক্যের ছাপ এলেও লেখালেখিতে বয়সের ছাপ পড়েনি একদমই।

কাজী আব্দুর রউফের কবিতা
পিসিমার ঠাকুর

রায় বাড়ির দেউড়ি পার হচ্ছিলাম
হঠাৎ পিছন থেকে পিসিমা ডাক দিল
বলল, ভয় পেলে বাবা! নিত্যই এ পথে যাও আসো
একটিবার পিসিমার দিকে ফিরেও তাকাও না
বাড়ির কর্তৃ তোমাকে কতবার দেখতে চেয়েছে
এসোই নাÑ ভিতরে এসো; তবে গায়ের জামাটা
খুলে এসো; তা না হলে তোমার
বুকের পাটাটা নজর করতে পারবে না বুড়ি
বললাম তা কেন? পিসিমা বললেন- দরকার আছে
যথারীতি কথা রেখে তুলসী আঙিনায় গিয়ে দাঁড়ালাম
কর্তৃ আমার মাথায় এক ঢালি শেফালী ফুল ঢেলে দিয়ে
বুকের জখমটায় চন্দন ঘসে দিলেন, হাতে ধরিয়ে দিলেন দুটো হরতকি।
ছাই-ভষ্ম কিছু না বুঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি
পিসিমা হাতের মুঠোয় পাঁচটা আধুলী গুঁজে দিয়ে আপন মনে বকছেন
সত্তর বছর আগের সিঁদুরের কৌটা, বাইশ বছর বয়সী খরমজোড়া,

বৃটিশ আমলে ছরতাখান ঠাকুর ঘরের প্রদীপটা পশ্চিমা শত্রুর কাছ থেকে কেড়ে আনলি,

তামার টোটা বুকে বিধল মরতে পারলি না, বাইচা আছিস ক্যান?
মনে করছিস কায়াত বংশের বাড়ি না গেলি কী হবে?
আমার নীশিকান্ত শ্মশানে পুড়া পরাণডা তোর জন্যি আছরা আছরি করে
ভাবছিলাম আমার মরা মুখি তুই আগুন দিবি
বাড়ি-ঘর তোর নামে হেবা দিলাম তুই দে
সেখান নিলি না বললি পরেরতা খাই না
আয়, ঠাকুর ঘরে আয়; দ্যাখ, ঠাকুরের বুকে তোর নাম ক্যান লিখে রাখছি?
আমি অশ্রু সিক্ত হলাম আর ভাবলামÑ
এমন ভালো মানুষও আছে!

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না