হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হাসান
ইসলাম কেবল একটি ধর্মই নয়, এটি হলো জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বারবার জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ)। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক মুসলিমই ইসলামী জ্ঞানার্জনকে অবহেলা করছেন, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নানা সংকট সৃষ্টি করছে।
ইসলামী জ্ঞান কেন অপরিহার্য?
১. ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি: সঠিক আকিদা-বিশ্বাস ও আমল জানা ছাড়া ঈমান পূর্ণতা পায় না। অনেকেই অজ্ঞতাবশত শিরক-বিদআতে জড়িয়ে পড়েন।
২. দৈনন্দিন জীবনের নির্দেশনা: নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ্জসহ ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি জানা ফরজ। এ ছাড়া ব্যাবসা-বাণিজ্য, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক আচরণের ইসলামী নীতিমালা জানা জরুরি।
৩. প্রতিরোধ গড়ে তোলা: বর্তমানে ইসলামবিরোধী প্রচারণা ও ভুল ব্যাখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সঠিক জ্ঞানই পারে এসব অপপ্রচার মোকাবেলা করতে।
বর্তমান চিত্র ও সংকট:
- অনেক মুসলিম পেশাগত বা সাধারণ শিক্ষায় উন্নতি করলেও ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে উদাসীন।
- মসজিদভিত্তিক মক্তব বা ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও অনেক অভিভাবক শিশুদেরকে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে বাধ্য করেন।
- ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের যুগে ভুল ফতোয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা ইসলামী জ্ঞানের অভাবে মানুষ গ্রহণ করে ফেলছে।
সমাধানের উপায়:
১. পরিবার থেকে শুরু: প্রতিটি পরিবারে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস চর্চা ও ইসলামী বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ: স্কুল-কলেজে ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং মক্তব শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
৩. সমাজের ভূমিকা: স্থানীয় মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও কমিউনিটি লাইব্রেরিতে বিনামূল্যে ইসলামী ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৪. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার: নির্ভরযোগ্য আলেমদের লেকচার, ইসলামিক অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
ইসলামী জ্ঞান অর্জন কেবল আলেম-উলামার দায়িত্ব নয়, এটি প্রতিটি মুসলিমের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। এই জ্ঞানই পারে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে আলোকিত করতে। আসুন, আমরা ইসলামের সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদের ঈমানী জীবনকে সুদৃঢ় করি এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করি।