হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হাসান
ইসলাম শুধু একটি ধর্মই নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। বিশ্বশান্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের শিক্ষা দেয়। এই নিবন্ধে আমরা ইসলাম ধর্মের কিছু সুন্দর ও গভীর দিক নিয়ে আলোচনা করব, যা এর সার্বজনীন আবেদনকে তুলে ধরে।
১. শান্তির ধর্ম ইসলাম
ইসলাম শব্দের অর্থই হলো “শান্তি” ও “আত্মসমর্পণ” (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে)। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ”
“আল্লাহ তাআলা শান্তির আবাসের দিকে ডাকেন।” (সূরা ইউনুস, আয়াত ২৫)
- ইসলাম যুদ্ধকে কেবল আত্মরক্ষা বা নির্যাতিতদের সাহায্যের জন্য বৈধ করেছে, অন্যায় আক্রমণকে সমর্থন করে না।
- নবী মুহাম্মদ (ﷺ) মক্কা বিজয়ের সময় ক্ষমার মহান উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।
২. সাম্য ও ন্যায়বিচার
ইসলাম সব মানুষকে সমান মর্যাদা দেয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا”
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১৩)
- নারী অধিকার: ইসলাম নারীদের সম্পত্তি, শিক্ষা ও বিবাহের অধিকার দিয়েছে, যা সে সময়ে বিপ্লবী পরিবর্তন ছিল।
- দাসমুক্তি: ইসলাম দাসপ্রথা নিরুৎসাহিত করে দাসমুক্তিকে সওয়াবের কাজ হিসেবে উৎসাহিত করেছে।
৩. সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা
ইসলাম জোরপূর্বক ধর্মান্তরকে নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ”
“ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৬)
- নবী (ﷺ) মদিনায় ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে শান্তিচুক্তি করেছিলেন।
- ইসলাম ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সহাবস্থানের সুযোগ দিয়েছে।
৪. আধ্যাত্মিক ও নৈতিক সুন্দর জীবন
ইসলাম শুধু বাহ্যিক ইবাদতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি অন্তরের পরিশুদ্ধির ওপর জোর দেয়:
- সদাচার: নবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে অন্যদের সাথে সর্বোত্তম আচরণ করে।” (বুখারি)
- পরোপকার: ইসলামে জাকাত, সদকা ও অসহায়দের সাহায্য করা ফরজ বা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
৫. বিজ্ঞান ও জ্ঞানের প্রতি উৎসাহ
ইসলাম জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ”
“বলো, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?” (সূরা জুমার, আয়াত ৯)
- ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীরা চিকিৎসা, গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায় বিপুল অবদান রেখেছেন।
ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য হলো এর ভারসাম্য ও সার্বজনীনতা। এটি শান্তি, ন্যায়বিচার, সহিষ্ণুতা ও জ্ঞানের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গঠনের পথ দেখায়। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অনুসরণ করেই বিশ্ব আজ শান্তি ও সম্প্রীতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।