ইসলাম ধর্মে নারী অধিকার: মর্যাদা ও সম-অধিকারের স্বীকৃতি

হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হাসান

প্রাক-ইসলামী যুগে নারীদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। আরব সমাজে কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, নারীদের সম্পত্তির অধিকার ছিল না, তাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। ইসলাম এই বর্বর প্রথাকে উৎখাত করে নারীকে দিয়েছে সম্মানজনক মর্যাদা। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নারীর অধিকার সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

১. ইসলাম পূর্ব যুগে নারী অবস্থা

  • আরব সমাজে নারী ছিল পণ্যবিশেষ
  • কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো
  • নারীদের উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো সম্পত্তি দেওয়া হতো না
  • বিধবাদের সাথে পশুর মতো আচরণ করা হতো

২. ইসলামে নারীর মৌলিক অধিকার

ক. জীবনধারণের অধিকার

“যে ব্যক্তি কন্যা সন্তানের লালন-পালন করবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।” (বুখারি)

খ. শিক্ষার অধিকার

“জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ)

গ. সম্পত্তির অধিকার

ইসলাম নারীকে দিয়েছে:

  • বিবাহের সময় মোহরানা লাভের অধিকার
  • পিতার সম্পত্তিতে নির্ধারিত অংশ
  • স্বাধীনভাবে নিজ সম্পদ ব্যবহারের অধিকার

৩. বিবাহ ও পারিবারিক অধিকার

  • নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
  • বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার (খুলা)
  • সন্তানের অভিভাবকত্বের অধিকার
  • সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার

৪. সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার

  • নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার
  • জ্ঞান চর্চা ও শিক্ষাদানের অধিকার
  • রাষ্ট্রীয় পরামর্শদানে অংশগ্রহণের অধিকার
  • যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা প্রদানের অধিকার

৫. ইসলামে নারীর আধ্যাত্মিক মর্যাদা

“নারীদের প্রতি উত্তম আচরণকারীই সর্বোত্তম মুমিন।” (তিরমিজি)

  • পুরুষের সমান ইবাদতের সওয়াব
  • জান্নাত লাভের সমান সুযোগ
  • মর্যাদাপূর্ণ মাতৃত্বের অবস্থান

৬. প্রচলিত ভুল ধারণার নিরসন

  • ইসলামে পর্দা নারীর মর্যাদার প্রতীক
  • বহুবিবাহের কঠোর শর্তাবলী
  • নারীর সাক্ষ্য সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা

ইসলাম নারীকে দিয়েছে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও অধিকার। আজকে পশ্চিমা বিশ্ব যে নারী অধিকারের কথা বলে, ইসলাম তা চৌদ্দশত বছর আগেই প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের কর্তব্য হল ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অনুযায়ী নারীদের তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না