আলাউল হোসেন
আওয়ামীলীগের কৌশলী রাজনীতির সাথে অন্যান্য দলের ভিন্নতা রয়েছে। আর এই ভিন্নতার কারণেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হয়েছে। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, আমলা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিন ইমেজের অধ্যাপক, লেখক, বুদ্ধিজীবী যাদের জীবদ্দশায় কোন দলের তোষামোদি করেননি, তাঁরাও অবসর গ্রহণের পরে একটি দলের গুণগান করে থাকেন। এদের মধ্যে ৯০% আওয়ামীলীগ সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
এর পেছনে রয়েছে সূক্ষ্ম কিছু কৌশল, যা অন্য কোন দলের কর্তাব্যক্তিদের মাথায় কখনও আসেনি। সম্প্রতি আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগীয় উপ-কমিটি গঠন করে চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ভিসি, অধ্যাপক কিংবা আমলাদের মধ্যে যারা ক্লিন ইমেজের তাদেরকে এই পদপদবী প্রদান করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদক কমিটিগুলোর সদস্য সচিব এবং বাকি ৩৩ সদস্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞ, সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্টজনদের থেকে মনোনীত করা হয়। ১৮টি উপকমিটিতে প্রায় ৭০০ জনকে রাখা হয়েছে, যাদের দলীয় কোন পদপদবী দেয়া হয়তো দলের পক্ষে সম্ভব হতো না।
এই কমিটির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, সদস্য-সচিব কিংবা সদস্য পদপ্রাপ্তির পর থেকেই বিশিষ্টজনেরা শুরু করে দেন আওয়ামী লীগের গুণগান গাওয়া। কেউ কেউ নিজেদেরকে দলের রথীমহারথী ভাবতেও শুরু করেন।
যদিও ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড কমিটির একজন সদস্যের চাইতেও কম গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের এই পদগুলো, তবুও তাঁরা নিজেদেরকে দলের প্রাণপুরুষ ভাবতে শুরু করেন। এভাবে দেশের বিশিষ্টজনদের এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অধিকাংশ ব্যক্তিকে আওয়ামীলীগ তাদের গুণগ্রাহী হিসেবে সবসময় পাশে পাচ্ছেন।
দুএকজন আমলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে আমি জানি- যারা পারিবারিকভাবেই বিএনপি কিংবা জামায়াতপন্থী, অথচ বিভিন্ন উপ-কমিটিতে পদপ্রাপ্তির পর থেকে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যার স্তুতি ছাড়া তাঁদের মুখে আর কোনো কথাই বর্তমানে নেই। এরকম কৌশলী রাজনীতিবিদ হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবী রাখেন। দীর্ঘদিন টিকে থাকার জন্য যে কোন কৌশল দূরদর্শী রাজনীতির পরিচায়ক।
