পাবনার কবি ও কবিতা: আবুল হাশেম

গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন

আবুল হাশেম
আবুল হাশেম ১৮৯৮ সালের ২০ নভেম্বর পাবনার ফরিদপুর উপজেলার খাগরবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৭ সালে প্রবেশিকা ও পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজ থেকে যথাক্রমে ১৯১৯ ও ১৯২১ সালে কৃতিত্বের সাথে আই.এ. এবং বি.এ. পাশ করেন। তিনি ছিলেন ফরিদপুর উপজেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট। তাঁর সাফল্যের খবরে দূর দূরান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। জ্ঞান পিপাসু এই মানুষ আইন পড়ার জন্য ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং প্রথম ভাগ পরীক্ষায় পাশও করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে দ্বিতীয় ভাগ সমাপ্ত করা সম্ভব হয় না। স্কুলে ছাত্রাবস্থায় তাঁর প্রথম কবিতা ‘রুদ্ধ করো না দ্বার’ কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘বঙ্গীয় মুসলিম পত্রিকায়’ ছাপা হয় ১৯১৬ সালে। ২০’ দশকের গোঁড়ার দিকে সাহিত্যের অঙ্গনে তিনি সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত হন। কবি আবুল হাশেম-এর বিখ্যাত কবিতা ‘খেজুর গাছ’-এর জন্য বাংলা একাডেমী সাহিত্য পদক অর্জন করেন। তাঁর রচিত হাতিমতায়ী কবিতায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর প্রিয় ছাত্র কবি ফররুখ আহমেদ রচনা করেছিলেন তাঁর অনবদ্য কাব্যনাটিকা ‘নওফেল ও হাতিম’। ১৯৫৭ সালে শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালের ২৪ জুন অসামান্য পা-িত্যসম্পন্ন এই বরেণ্য পুরুষ মৃত্যুবরণ করেন।

আবুল হাশেমের কবিতা
বিধাতার ভিক্ষা

হাশরের দিন বিচারে বসিয়া শুধাবে জগৎস্বামী
তুমি তো আমারে কর নাই সেবা রুগ্ন ছিলাম আমি!
কহিবে মানব, তব সেবা হায় ওগো নিখিলের প্রভূ
সাধ্য কি মোর? পারিনু বুঝিতে কহিবে তখন বিভু।
ভৃত্য আমার রুগ্ন আছিল সে কথা কি মনে আছে?
সেবিলে তাহারে মোর দেখা তবে পাইতে তাহার কাছে!
আবার বিধাতা শুধাবে তখন আদমের সন্তান
ক্ষুধায় কাতর অন্ন চেয়েছি করোনি অন্নদান।
কহিবে মানব, রাজ্জাক তুমি সবার খাদ্যদাতা
তোমারে কেমনে অন্ন দিতাম মূঢ় আমি বুঝি না তা!
কহিবে খোদা, বান্দা আমার অন্ন চাহিল দান
যদি তারে দিতে, আজি হেথা তবে পেতে তার প্রতিদান।
আবার কহিবে, আদম তনয় চাহিলাম আমি জল
পিপাসায় বারি দাওনি আমায় এত ছিলে বিহ্বল?
কহিবে সেজন সবার তৃষায় তুমিই দিতেছ বারি
তোমার পিপাসা আমি মিটাতাম কেমনে? বুঝিতে পারি!
আল্লা কহিবে, বান্দা আমার মাগিল আমার তৃষার জল
দাওনি তাহারে দিতে যদি তবে পেতে আজি তার ফল।

আপনি এই সাইটের কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না