গ্রন্থ সম্পাদনা: আলাউল হোসেন
বন্দে আলী মিয়া
বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনার রাধানগর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। শিশু সাহিত্যিক হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল। তিনি ১৯২৩ সালে আর এম একাডেমী থেকে প্রবেশিকা পাশ করে ভর্তি হন কলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমীতে। তিনি ছিলেন কলকাতা আর্ট একাডেমীর প্রথম মুসলিম ছাত্র। ১৯৩৪ সালে কলকাতা কর্পোরেশন টিচার্স কলেজ থেকে টিচার্স সার্টিফিকেট ডিগ্রি পাশ করেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কাজ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরি শুরু করেন কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সেখানে চাকরি করেন এবং পরবর্তীকালে ঢাকায় চলে আসেন এবং ছবি এঁেক জীবননির্বাহ করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ময়নামতিরচর’, ‘অনুরাগ’। ছোটদের জন্য তাঁর লেখা বই ‘চোরজামাই’, ‘মেঘকুমারী’, ‘রূপকথা’, ‘কুঁচবরণ কন্যা’, ‘শিয়াল প-িতের পাঠশালা’ ইত্যাদি। তিনি ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
বন্দে আলী মিয়ার কবিতা
ময়নামতীর চর
এ-পারের এই বুনো ঝাউ আর ও-পারের বুড়ো বট
মাঝখানে তার আগাছায় ভরা শুকনো গাঙের তট।
এরই উঁচু পারে নিত্য বিহানে লাঙল দিয়েছে চাষী,
কুমীরেরা সেথা পোহাইছে রোদ শুয়ে শুয়ে পাশাপাশি।
কূলে কূলে চলে খরমূলা মাছ, দাঁড়কানা পালে পালে
ছোঁ দিয়ে তার একটারে ধরি গাঙচিল বসে ডালে।
ঠোঁটে চেপে ধরি’ আছাড় আছাড় নিস্তেজ করি তায়
মুড়ো পেটি লেজ ছিঁড়ে একে একে গিলিয়া গিলিয়া খায়।
এরই কিছু দূরে একপাল গরু বিচরিছে হেথা সেথা
শিঙে মাটি মাখা দড়ি ছিঁড়ে ষাঁড় চলে সে স্বাধীনচেতা।
মাথা নিচু করি কেহ বা ঝিমায় কেহ বা খেতেছে ঘাস
শুয়ে শুয়ে কেহ জাবর কাটিয়া ছাড়িতেছে নিঃশ্বাস।
গোচর পাখিরা ইহাদের গায়ে নির্ভয়ে চলে ফেরে
উকুন আঠালু ঠোকরিয়া খায় লেজের পালক নেড়ে।
বক পাখিগুলো গোচরকীয়ার হয়েছে অংশীদার
শালিক কেবলই করিছে ঝগড়া কাজ কিছু নাই তার।
নতুন চরের পলি জমিটাতে কলাই বুনেছে যারা
আখের খামারে দিতেছে তারাই রাতভর পাহারা।
খেতে কোণায় বাঁশ পুঁতে পুঁতে শূন্যে বেঁধেছে ঘর
বিচালী বিছায়ে রচেছে শয্যা বাঁশের বাখারি ‘পর।
এমন শীতেও মাঝ মাঠে তারা খড়ের মশাল জ্বালি
ঠকঠকি নেড়ে করিছে শব্দ হাতে বাজাইছে তালি।
(সংক্ষেপিত)
